ওদের হারাতে দিয়ো না (৩য় পর্ব):লিফলেটিং-এর খুঁটিনাটি

গত পর্বে তোমাদের সাথে কথা বলেছিলাম ক্যাম্পেইন নিয়ে। ক্যাম্পেইন কী, কেন এবং কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা।[১] এই পর্বে আমরা ক্যাম্পেইনিং-এর একটি নির্দিষ্ট ধরন—লিফলেট বিতরণ—নিয়ে কথা বলব। কোত্থেকে লিফলেট সংগ্রহ করবে, কোথায় কীভাবে বিতরণ করবে—এই সবকিছু বুঝিয়ে বলব আজকের আলোচনায়।

ধরো, তুমি সমাজের অবক্ষয়গুলো সম্পর্কে বুঝতে পারছ, ইসলাম যে এই সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান তা-ও জানো। তোমার বুকে আগুন জ্বলছে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার। হয়তো সমাজের একটা সমস্যা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে চাও, কিংবা কোনো ভালো উদ্যোগের প্রচার করতে চাও। কী করবে এখন? ফেসবুকে পোস্ট করবে? অবশ্যই করতে পারো। কিন্তু মনের কোণে প্রশ্ন থেকে যায়—সবাই কি দেখবে?

এখানেই আসে লিফলেটের কথা। একটা ছোট্ট কাগজ, কিন্তু তার শক্তি বিশাল! হাতে হাতে পৌঁছে যেতে পারে, চোখে পড়তে পারে, চিন্তার খোরাক জাগাতে পারে। অনেকে আবার না দেখেই ছুড়ে ফেলেও দিতে পারে। এটাই বাস্তবতা। কারণ লিফলেট বিতরণ মানেই যেন জনসাধারণের ভিড়ে কাগজ গুঁজে দেওয়া আর মানুষজনের বিরক্ত মুখ দেখা। কিন্তু সত্যি বলতে, সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল জানলে লিফলেটিং হতে পারে চমৎকার ও কার্যকরী একটি অ্যাকটিভিজম! চলো তবে, দেখে নিই কীভাবে কম খরচে, কম পরিশ্রমে এবং সর্বোচ্চ কার্যকারিতার সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করা যায়!

প্রিন্টিং ও খরচ কমানোর টিপস

লিফলেটিং-এর জন্য প্রথমেই দরকার মানসম্মত, চোখে লাগা ও চিন্তার খোরাক জোগানোর মতো লিফলেট। লস্ট মডেস্টির ফেসবুক পেইজে সামাজিক অবক্ষয় ও কিশোর-তরুণদের সমস্যাগুলো সম্পর্কিত চমৎকার ডিজাইনের লিফলেটগুলোর সফট কপি (pdf, Ai এবং word ফাইল) পেয়ে যাবে।[২] সেগুলো তোমরা চাইলে স্থানীয় প্রিন্টিং প্রেস থেকে অথবা অনলাইন বিভিন্ন শপ থেকে প্রিন্ট করিয়ে নিতে পারো।[৩] 

কেবল প্রিন্ট করিয়ে নেবে বললেই তো হবে না, প্রিন্ট করাতে টাকা লাগবে। তোমাদের বাজেট ঠিক করে সে অনুযায়ী লিফলেট প্রিন্ট করাবে। নিচে খরচ কমানোর কিছু টিপস দেওয়া হলো, এগুলো ফলো করতে পারো।

  • বেশি পরিমাণে প্রিন্ট করালে খরচ কমবে। সম্ভব হলে ৫০০-১০০০ কপি একসাথে ছাপানোর চেষ্টা করো। তাহলে লিফলেট প্রতি খরচ ২/৩ টাকা পড়বে।
  • স্থানীয় প্রেস থেকে ছাপালে খরচ কম পড়বে। অনলাইন থেকে অর্ডার করলে ডেলিভারি ফি-ও দিতে হবে।
  • ফটোকপির দোকান থেকে ছোট পরিসরে প্রিন্ট করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লিফলেট প্রতি খরচ একটু বেশি আসবে। তবে বেশি পরিমাণে লিফলেট নেওয়ার বাজেট না থাকলে এইভাবে করা যেতে পারে।
  • বেশি করে প্রিন্ট করালে তোমার অন্যান্য বন্ধু, বড় ভাইদেরও এতে অংশ নিতে বলো।

লিফলেটিং-এর স্মার্ট উপায়

লিফলেট হাতে নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের হাতে ধরিয়ে দিলেই হবে না। বরং কৌশলী হতে হবে। নিচে দেওয়া টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারো:

  • স্ট্রিট দাওয়াহ: জনবহুল জায়গা বেছে নাও—কলেজ গেট, খেলার মাঠ, ব্যস্ত বাজার বা কোনো মাসজিদের প্রবেশপথ। লিফলেটের বিষয়বস্তু নিয়ে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলো। কথা বলে কোনো বার্তা দিলে লিফলেট ফেলে দেওয়ার প্রবণতা কমবে।
  • কিশোর গ্যাং ও তরুণদের সঙ্গে মিটআপ: সমাজের চোখে দুষ্টু ও ডানপিঠে তরুণদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করো। তাদের বুঝিয়ে বলো, আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের কাছে দাওয়াহ পৌঁছে দাও।
  • মাসজিদভিত্তিক আলোচনা (হালাকাহ): স্থানীয় ইমামদের সঙ্গে কথা বলো এবং মাসজিদের মুসল্লিদের মাঝে ইসলামিক আলোচনার সময় লিফলেট বিতরণ করো।
  • জুমুআকে কাজে লাগাও: খতিবদের সহযোগিতায় জুমুআর খুতবায় প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করানোর ব্যবস্থা করো। এরপর খুতবা শেষে মুসল্লিদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করো।
  • সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছাও: এমন সময় এমন জায়গায় গিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে হবে, যখন মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে এবং লিফলেট মনোযোগ দিয়ে পড়ার সময় পাবে। যেমন, ফজরের পর পর মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে। তাই ফজরের সালাতের পর মাসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে। এতে করে অভিভাবক শ্রেণির মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। আবার স্কুল বা কলেজের ক্লাস শুরুর আগে বা ছুটির সময় ছাত্রদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে। স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় হলের বাইরে অসংখ্য অভিভাবক অপেক্ষায় থাকেন, অলস সময় কাটান। এসময় তাদের মাঝে লিফলেট বিতিরণ করা যেতে পারে। দূরপাল্লার বাস বা ট্রেন যাত্রায়ও মানুষ অলস সময় কাটায়। পড়ার মতো কিছু পেলে চোখ বুলিয়ে নেয়। চায়ের দোকান, স্টেশনারি, ফাস্টফুডের দোকানে কিছু কপি রেখে দিতে পারো। আগ্রহীরা পড়বেই!
  • প্রচারণা: শুধু লিফলেট বিতরণ করাই যথেষ্ট না, বরং এলাকায় মাইকিং করে বার্তা ছড়িয়ে দাও। এতে জনসচেতনতা আরও বাড়বে। ক্যাম্পেইনের ছবি-ভিডিও তুলে ফেসবুকে পোস্ট করো। অন্যরা দেখলে অনুপ্রাণিত হবে। প্রভাবশালী কিছু ঘটনা বা প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করো। এতে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
  • মার্জিত আচরণ: লিফলেট দেওয়ার সময় সুন্দর করে কথা বলো। হাসিমুখে তাদের হাতে দাও, ছোট্ট করে বিষয়টা সম্পর্কে বলো—’ভাই, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা, একটু পড়ে দেখবেন?’ কাউকে লিফলেট দিলে বলো, ‘ভাই, ফেলে দেবেন না, পড়বেন।’  যদি বলো, ‘ভাই, জানেন অশ্লীল ভিডিও মস্তিষ্কের কী ক্ষতি করে?’— তাহলে লোকজন কৌতূহলী হবে। তবে ব্যস্ত রাস্তায় বা মার্কেটে হুটহাট কারও হাতে লিফলেট গুঁজে দেবে না। এটা সুন্দর আচরণ না। তাছাড়া এমন করলে বেশিরভাগ লোকই লিফলেট ফেলে দেবে।

পরিশেষে

লিফলেটিং শুধু কাগজ বিলানো নয়, এটা একটি আন্দোলন, একটি মিশন! তবে শুধু বিলিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ নয়! মানুষের কাছে পৌঁছানোই আসল লক্ষ্য। যদি বুদ্ধি খাটিয়ে, পরিকল্পনা করে কাজ করো, তাহলে ইনশাআল্লাহ, এর ফলাফল হবে বিস্ময়কর। তাই ভয় না পেয়ে প্রস্তুত হও, কৌশল ঠিক করো এবং মাঠে নেমে পড়ো!


১. গত পর্ব পড়ে নাও এখান থেকে – https://sholo.org/oder-harate-dio-na-02

২. লস্ট মডেস্টির ফেইসবুক পেইজ – https://www.facebook.com/lostmodesty 

লিফলেট, পোস্টারসহ সকল দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবে এখানে – https://tinyurl.com/yrthxssj 

বয়কট লিফলেট – https://tinyurl.com/bdhn6e5w

মাসজিদের খতিবদের দেওয়ার জন্য – https://chintaporadh.com/id/9978 

৩. অনলাইনে লিফলেট অর্ডার করতে পারো এখান থেকে – 

Muwahhidah Shop –  https://www.facebook.com/Muwahhidah.Bookshop.H24 

Mashhadah Fragrance – https://www.facebook.com/MashhadahFragrance 


by

Tags: