তোমার বন্ধু সাইজে খাটো, তুমি তাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলে – ‘কিরে ট্যাপা কই যাস?’
আবার ক্লাসের সবথেকে লম্বা বন্ধুকে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলে ওঠো – ‘কিরে তালগাছ কেমন আছিস?’
আবার তোমার কোনো তোঁতলা বন্ধুকে দেখলে এক গাল হেসে অভিনয় করে বলো- ‘কিরে ক্যা ক্যা ক্যা কি করিস!’
মোটাকে মোটু, শুকনোকে চিকনা, যাদের গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ তাদের কাইল্লা, চোখে চশমা থাকলেই কানা বলে চিৎকার করা তোমার নিত্যদিনের রুটিন, না বলতে পারলে ছটফট করে উঠে ভেতরটা! (একটাবার ভেবে নাও তো, কতটা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় বশবর্তী হয়ে আছো তুমি!)
এভাবেই তুমি তোমার বন্ধুদের একেক জনকে একেক মন্দ নামে ডাকো, যা শুনে সে রেগে ওঠে কিংবা মুখে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই কষ্ট পায়। কিংবা তোমার দেওয়া এই বিচিত্র নামগুলোতে সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। মেসেঞ্জার গ্রুপেও কিন্তু নিকনেমে সবাই একেকজনকে একেকরকম নাম দেয়। ফ্রেন্ডসার্কেলকে স্লেজিং না করলে মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষই মনে হয় না আর।
এই যে এতসব নাম বললাম, এগুলো বলে কাউকে সম্বোধন করা একেকটা কবিরা গুনাহ। এমনও হতে পারে এই কবিরা গুনাহের জন্য কাউকে জাহান্নামের আগুনে লক্ষ লক্ষ বছর পুড়তে হচ্ছে!
তুমি প্রত্যহ হাসি-ঠাট্টায় অহরহ মন্দ নাম বলে যাচ্ছ। তোমার কাছে এসব কোনো গুনাহই মনে হচ্ছে না। কিন্তু তুমি কি জানো ঠিক এই কারণে আল্লাহ পাক তোমার নাম জালেমদের তালিকায় নিতে পারেন!
আল্লাহ পাক বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ। তোমাদের কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারীদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অন্য কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা, তারা উপহাসকারিণীদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না, ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত অপরাধ। আর যারা এহেন অপরাধ থেকে তওবা না করে তারাই প্রকৃত জালেম।” [আল হুজুরাত, ১১]
একটু ভেবে দেখো তো, এটা তোমার জন্য কতো মারাত্মক রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! একদিকে আল্লাহ পাকের কাছে তুমি জালেম! আরেকদিকে কবিরা গুনাহের কারণে আযাবের ভয়!
সেই সাথে তোমার বন্ধু কষ্ট পেল, এবং তোমার ব্যক্তিত্ববোধটুকুও দিন দিন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে!
বন্ধুর সাথে তো সম্পর্ক থাকা চাই মধুর। তুমি কি জানো তোমার বন্ধু তোমার কাছে কি চায়? তোমার বন্ধু তোমার কাছে চায়-
• উত্তম ব্যাবহার।
• বিপদে সাহায্য।
• আন্তরিকতা।
• ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।
তাই বন্ধুর সাথে দেখা হলে একে অপরকে দেখলে সালাম দিবে। কখনও যদি, ঝগড়াঝাঁটি হয়ে যায়, তবে নিজে আগে থেকে মিটমাটের জন্য যাবে, বিপদে সাহায্য করবে। দেখবে সেটা একদিন প্রতিদান হিসেবে ফিরে আসবে।
তাই আজই তওবা করো। হাসি-তামাশার ছলেও বন্ধুদের আর মন্দনামে ডাকা নয়। কি দরকার সামান্য একটু বিনোদনের জন্য নিজেকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাবিত করার? আর এমন অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু আসে! ভেবে দেখো তো একবার! হাজারও ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, দান-সদকা করলে অথচ মৃত্যুর সময় জালেম হয়ে মরতে হলো! আর মন্দ নামে ডেকে তুমি তো বান্দার হক নষ্ট করলে। সেক্ষেত্রে কিভাবে ক্ষমা পেতে পারো? যদি তোমার বন্ধু ক্ষমা না করে?