টুকলিবাজি

গভীর ‘মনোযোগের সাথে বন্ধুকে MCQ এর উত্তর বলে দিচ্ছিলাম। কখন যে স্যার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারিনি। মাথায় একটা গাট্টা খেলাম হটাৎ। ভাবলাম পেছনের বন্ধু মনে হয় MCQ এর উত্তর জানার জন্য আমাকে ডাকছে। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পেছনের বেঞ্চে একটু হেলান দিয়ে ফিসফিস করে বললাম- কোনটা পারিস না জলদি ক। উত্তরে গালে একটা চড় খেলাম। এবার ভয় পেয়ে গেলাম। দোস্ত আর যাই করুক চড় মারবে না তো। তাহলে? নিশ্চয়ই স্যার!

ঘাড় ঘুরে তাকাতেই দেখলাম মোটা ফ্রেমের চশমা পরা সুদর্শন এক স্যার আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। খাসা ভিলেনি হাসি।

– খুব জনসেবা হচ্ছে, না? এই বলে স্যার আমার খাতা নিয়ে নিলেন।

এসএসসি পরীক্ষা। এইসময় খাতা নিলে যতটা ভয় পাবার কথা ততটা পেলাম না। কারণ আমার সব দাগানো হয়ে গেছে। আর এভাবে খাতা হারানো আমার কাছে ডালভাত।

আসলে জানেন কী, আমার মনটা খুব নরম। কেউ কোনো বিপদে পড়লে, সাহায্য চাইলে আমি না করতে পারি না। আমার বন্ধু, আমার ক্লাসমেইট… একইসাথে ক্লাস করি, খাই-দাই-ঘুরি, পাড়ার বিভিন্ন আম গাছে পিকেটিং করি, গার্লস স্কুলের সামনে রোমিও হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি (আল্লাহ মাফ করুন) আর তারা পরীক্ষার হলে সাদা খাতা জমা দিবে, কলম কামড়াতে কামড়াতে প্রায় খেয়ে ফেলবে এ দৃশ্য আমি কোনোমতেই সহ্য করতে পারি না। আমার বুক ভেঙ্গে যায়। চোখে পানি চলে আসে। তাই সবাইকে সমানে সাহায্য করি।

কোচিং আমার খুব একটা ভালো লাগতো না। তারপরেও যেতে হতো। কোচিং এর পরীক্ষাগুলাতে তেমন গার্ড থাকতো না। মন শান্তি করে দেখাদেখি করতাম। জনসেবা করতাম। বন্ধুরা খুশি হয়ে সিংগাড়া, সমুচা খাওয়াত। মালদার বন্ধুরা পেস্ট্রি কেক, বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি ফরেন জিনিস খাওয়াত। আমি অবশ্য খেতে চাইতাম না। না খেলে আবার তারা কষ্ট পাবে! তাদের কষ্ট আমি কীভাবে সহ্য করব! আগেই বলেছি আমার মন খুব নরম। তাই যে যাই দিত তাই খেতাম। সর্বভূক।

ভার্সিটিতে উঠার পর জনসেবার পরিসর বাড়ল। পরীক্ষায় দেখানোর পাশাপাশি যুক্ত করলাম নতুন সেবা- প্রক্সি দেওয়া। রুমমেটদের সবার দিন শুরু হতো রাত ১২ টার পরে। মুভি, সিরিয়াল, ২৯, ভিডিও গেইমস, জানপাখির সাথে ফোনে কুটুর কুটুর…। এতো ব্যস্ততা আর দায়িত্ব পালন করে এরা ঘুমাতে যেত ফজরের আযান শুনে।

দয়ামায়াহীন স্যারগুলো আবার ক্লাস দিয়ে রাখত সকাল ৮ টায়। স্যারেরা এত নিষ্ঠুর। এই অসহায় ছেলেগুলোকে ৮ টায় ক্লাসে আসতে বলা যুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। আহা! ছেলেগুলোকে কি ঘুমানোর সময়ও দিবে না! ওদের দুঃখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না। আবেগী গলায় কাব্যিক ঢং এ বললাম- তোরা এটেন্ডেন্স নিয়ে চিন্তা করিস না… এই আমি বেঁচে থাকতে তোদের কোনো ভয় নেই।

গণহারে প্রক্সি দিতাম। এক ক্লাসে ৪/৫ টাও।

আইডি ২০
– জ্বি স্যার (স্বর মোটা করে)

আইডি ৪০
– ইয়েস স্যার (স্বর চিকন করে)

আইডি ৫৬
– প্রেজেন্ট স্যার (বুক ফুলিয়ে। কারণ এটাই আমার আইডি।)

আইডি ৭৬
– উপস্থিত স্যার। (খাতার মধ্যে মাথা লুকিয়ে বা বেঞ্চের নিচ থেকে কলম তুলতে তুলতে)

এত জনসেবা করি ভেবেই বোধহয় আল্লাহ একের পর এক রিযক পাঠাতে থাকলেন!

বন্ধুদের টাকায় ক্যান্টিনের চা, সিংগাড়া, পরোটা-ডিম ভাজি, ডিউয়ের কাচের বোতল খেয়ে খেয়ে আমার ভুড়ি হয়ে গেল!
এভাবেই চলছিল আমার জনসেবা। হটাৎ দুইটা ঘটনা ঘটল। পরপর।

১। আমাদের একটা সেমিস্টারে ভাইভা ছিল এক কোর্সের। ফাইনালের আগের সপ্তাহে। সেই স্যারের ভাইভার নিয়ম ছিল ক্লাস নোট নিয়ে ভাইভা দিতে যেতে হবে।

আমি সুন্দর করে নোট করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার খাতাটা একজন টেবিলের ওপর থেকে নিয়ে যায়। আমি রুমে ছিলাম না সে সময়। পরে আর ফেরত দেয়নি। আমিও খুঁজে পাইনি।
তো, ভাইভা কীভাবে দিব সেই চিন্তা করছিলাম। এমন সময় পাশের রুমের বন্ধু বলল- দোস্ত, চিন্তা করিস না, তুই আমার খাতা নিয়ে যাস।

তার ভাইভা ছিল সকালে। আমারটা কিছু পরে। সে ভাইভা দিয়ে আসলো। আমি গেলাম ওর খাতা নিয়ে। তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলাম কোথাও ওর নাম লেখা আছে কিনা। নেই। তারপরেও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তার খাতার কাভার খুলে ফেললাম।

স্যার খাতা উলটাচ্ছেন আর ভাইভা নিচ্ছেন। মোটামুটি পারছি। স্যার আমাকে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলেন- এটা কি তোমার খাতা? সিউর?
আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিবারই বললাম- ইয়েস স্যার।

হটাৎ এক পেইজে যাবার পর স্যার হুংকার দিয়ে বললেন- এটা কী? এটা তো আমার সিগনেচার। (স্যার একটা জায়গায় খুব ছোট করে সিগনেচার দিয়ে রেখেছিলেন)

তুমি কেন আমাকে মিথ্যা বললে? কেন বললে এটা তোমার খাতা? তোমার মুখে তো দাঁড়ি দেখছি!

আমার লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেল। একটা কথাও বলতে পারলাম না। স্যারকে যে সরি বলব এটাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না। পরের কয়েকটা দিন শুধু মাথার মধ্যে ঘুরছিল,

‘তোমার মুখে তো দাঁড়ি দেখছি, তোমার মুখে তো দাঁড়ি দেখছি’!

এর ৭ দিন পর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলো। শেষ পরীক্ষার দিন ঘটল আরেকটা ঘটনা।

আমি একটা প্রশ্ন পারছিলাম না। একটা জায়গায় আটকে ছিলাম। পরীক্ষা হচ্ছিল বিশাল হলরুমে। হটাৎ কারেন্ট চলে যাওয়াতে রুম অন্ধকার হয়ে গেল। আমি সুযোগটা কাজে লাগালাম। কিছুদূরেই আমার এক বন্ধু বসে ছিল। ডাক দিলাম ওর নাম ধরে… ওর ঠিক পেছনেই স্যার দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবছা অন্ধকারে ঠিক খেয়াল করতে পারিনি। স্যার সঙ্গে সঙ্গে আমার আর ওর খাতা নিয়ে গেল। ১০ মিনিট পর ফেরত দিল।
আমি এই ১০ মিনিটের মধ্যে ঐ সমস্যাটার সমাধান করে ফেলেছিলাম প্রশ্নপত্রের অপর পৃষ্ঠায়। আমি সব এন্সার দিয়ে আসলাম। কিন্তু আমার বন্ধু সব শেষ করতে পারল না। ওর মুখটা কালো হয়ে গেল দুঃখে। আমি এই ঘটনায়ও বেশ নাড়া খেলাম।

বিকালে এক এক করে বাড়ি যাচ্ছিল সবাই হল ছেড়ে। মন খারাপ নিয়ে মাঠের এক কোণায় বকুল গাছের নিচে বসে ছিলাম আমি। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। ঐ বন্ধুর মন খারাপ করা মুখ আর স্যারের বলা সেই কথাগুলা মাথায় ঘুরছিল- তুমি কেন আমাকে মিথ্যা বললে? কেন বললে এটা তোমার খাতা? তোমার মুখে তো দাঁড়ি দেখছি…!

টিকেট কাটা ছিল বাসের। সময়ও হয়ে আসছে। কিন্তু এতই মন খারাপ হয়ে ছিল, কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এভাবে কতক্ষণ গেল খেয়াল নেই। ঘাড়ে একটা মৃদু স্পর্শ পেলাম। দেখি মাহমুদ দাঁড়িয়ে আছে আমার পেছনে। কাঁধে ব্যাগ। বাসায় যাচ্ছে। আমার পাশের রুমেই থাকে।

কী রে, বাসায় যাবি না?- জিজ্ঞাসা করল ও।
– কী জানি! হাসি দিয়ে বললাম আমি। আমার সেই হাসিতে হতাশা, দুঃখ সব মিশে ছিল।
– কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?
– কিছু না, মন খারাপ কই দেখলি!
– আরে, বল না!

মাহমুদকে বললাম। ভাইভার কথা আর আজকে পরীক্ষার হলের কথাও। সে সব শুনে বলল- দেখ, আল্লাহ মনে হয় তোকে এই পাপ কাজটা থেকে ফেরাতে চাচ্ছেন, তাই হয়তো এমনটা করেছেন। দেখ, চিন্তা কর তুই। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবি- এই যে প্রক্সি দেওয়া, পরীক্ষায় দেখাদেখি করা সেটা পাপ। সেটা প্রতারণা। আল্লাহ চাচ্ছেন না তুই এগুলো করিস। থাক যাইরে… ট্রেনের সময় হয়ে যাচ্ছে।
প্যান্টের ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে সে উঠে গেল। কিছুদূর যাবার পর আমার দিকে ফিরে হাসিমুখে চিৎকার করে বলল- মন খারাপ করিস না। বাড়িতে যা। ছুটি কিন্ত বেশি দিনের না!

আমিও উঠে পড়লাম। রুমে ফিরে আসলাম। ব্যাগ গুছিয়ে ঝড়ের বেগে বাস ধরার জন্য বের হলাম।

বাসে উঠার পর মাহমুদের কথাগুলো ভাবছিলাম। আসলেই কি প্রক্সি দেওয়া, পরীক্ষায় অন্যদের সাহায্য করা পাপ? চলন্ত বাসে খুব একটা ভালো নেট পাবার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও সার্চ দিলাম। কিছু লিংক আসলো। সেগুলোতে অনেক কুরআন-হাদীসের রেফারেন্স দেওয়া। সব পড়ে বুঝলাম যে, হ্যাঁ, মাহমুদের কথাই ঠিক। এগুলো পাপ। প্রতারণা। আমি না বুঝে অনেক পাপ করেছি। শয়তান আমাকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। পরে একজন আলিমকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনিও এমনটাই বললেন। তোমাদের জন্য পুরো বিষয়টি একটু সহজ করে বলি।

ধরো, আমি যখন প্রক্সি দিচ্ছি তখন আসলে হচ্ছে টা কী?
১। আমি মিথ্যা কথা বলছি। আমার আইডি ৩০ না, কিন্তু স্যারকে বলছি যে, আমার আইডি ৩০।
২। আমি প্রতারণা করছি। স্যারদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি।
৩। আমি প্রক্সি দিচ্ছি বলেই আমার বন্ধুরা এটেন্ডেন্সের নম্বর পাচ্ছে। এটা তাদের জন্য হালাল হচ্ছে না। কারণ, তারা তো আসলে ক্লাসে আসেনি।
৪। আমি প্রক্সি দিচ্ছি। এর ফলে বন্ধুরা এটেন্ডেন্সের নম্বর হারানোর ভয় করছে না। তারা এই সুযোগে রাত জেগে বিভিন্ন পাপের কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তারা পাপ করছে। পাপের সাময়িক মজা পাচ্ছে। কিন্তু আমি সেই সাময়িক মজাটুকুও পাচ্ছি না। কিন্তু আমাকে তাদের পাপের ভাগীদার হওয়া লাগছে। আল্লাহর কথার অবাধ্য হচ্ছি।

‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ ( সূরা মায়িদা, ৫ : ২ )

পরীক্ষায় দেখাদেখি করে লেখার সময় আমি কী কী করছি–
১। আমি প্রতারণা করছি। আমি যে প্রশ্নের উত্তর জানি না সেই প্রশ্নের উত্তর লিখছি। এতে স্যার ভাবছেন, আমি সেই প্রশ্নের উত্তর জানি। স্যারদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি।
২। আমি বন্ধুদের দেখাচ্ছি। সে ভালো রেসাল্ট করছে। ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু সে তো ভালো রেসাল্টের যোগ্য ছিল না। প্রতারণার মাধ্যমে এমন করল।
৩। আমি বন্ধুদের পরীক্ষার খাতায় দেখাব, তারা ভালো নম্বর পাবে… এই আশায় তারা পড়াশোনায় অবহেলা করে। এর ফলে ভালো রেসাল্ট নিয়ে বের হলেও তেমন যোগ্যতা অর্জন হয় না। কর্মক্ষেত্রে গেলে সে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুক্ষীণ হবে। জাতি তার সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।

আর এই প্রক্সি দেওয়া, পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করা- এগুলো আমি বন্ধুদের উপকার করার মানসিকতা থেকে করলেও দিনশেষে আমার বন্ধুদের ক্ষতিই করছি।

এখন এই মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, অসততা, অন্যের ক্ষতি করা এগুলোর ব্যাপারে কুরআন, হাদীসের কী বক্তব্য?

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সূরা মুমিন, ৪০ : ২৮)

মুহাম্মাদ ﷺ বলেছেন,
‘মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। কারণ, মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।’

প্রতারণার ব্যাপারে মুহাম্মাদ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)

হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, যেকোনো কাজে-কর্মে প্রতারণা করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত হাদীসের আওতাভুক্ত। পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টিও সেগুলোর মধ্যে একটি।

পরীক্ষায় নকলের ব্যাপারে শাইখ বিন বায রহ. এর ফাতাওয়া:
তিনি বলেন,‘পরীক্ষায় নকল করা মানুষের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার মতোই হারাম ও ন্যাক্কারজনক কাজ। বরং সাধারণ লেনদেনের চেয়ে পরীক্ষায় নকল করা বেশি ভয়ানক হতে পারে। কারণ, নকলের মাধ্যমে সে হয়তো বড় বড় চাকুরি লাভ করবে। সুতরাং, পড়াশোনার সকল ক্ষেত্রে নকলের আশ্রয় নেওয়া হারাম। কারণ, সহীহ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا

“যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”

তাছাড়া এটি একটি খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা। আর আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা জেনে-শুনে খিয়ানত কোরো না আল্লাহ ও রাসূলের সাথে এবং খিয়ানত কোরো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতের ক্ষেত্রে।” (সূরা আনফাল, ৮ : ২৭)

সুতরাং শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক হলো, তারা যেন কোনো পাঠ্যবিষয়েই নকলের আশ্রয় না নেয়। বরং তারা যেন প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রম করে। যেন তারা বৈধভাবে উত্তীর্ণ হয়।’

ভাই দেখো, আমরা দেখাদেখি করে ভালো রেসাল্ট করলেই যে ভালো জব পাব, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং এভাবে দেখাদেখি করার কারণে, নকল করার কারণে আল্লাহ আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে আমাদের রিযক থেকে বরকত তুলে নিতে পারেন।

‘আর যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকতগুলো তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত, তার কারণে আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সূরা আরাফ, ৭ : ৯৬)

দেখো ভাই, হারাম কখনো ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। হারাম হারামই। তুমি ধরো হারাম কাজ করে ভালো চাকরি পেলে, অনেক টাকা কামায় করলে, কিন্তু দেখবে তোমার অন্তরে শান্তি নেই। রাতে ঘুম আসে না। ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয়। ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করতে হয়। অথবা দেখবে তোমার ছেলে ফেন্সি খায়, বাবা খায়, তার বন্ধু-বান্ধব সব হিরোইঞ্চি। অথবা দেখবে তোমার মেয়ে খুব খারাপ কাজ করে বেড়াচ্ছে, তোমার বউ পরকীয়া করছে। হারামের শাস্তি এই দুনিয়াতেই পাবে। এবং আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি তো তোলায় থাকল।

দেখো ভাই, ছোট ছোট ব্যাপারগুলোতে আল্লাহর হুকুম মানার মাধ্যমেই আসলে আমরা কঠিন পরীক্ষায় উতরে যাবার তরবিয়ত পাই। এখন আমরা ৫ মার্কের লোভ সামলাতে পারছিনা। নকল করছি, দেখাদেখি করছি, প্রক্সি দিচ্ছি। কর্মজীবনে প্রবেশ করলে দেখা যাবে, ৫ লাখ টাকার ঘুষের অফার চলে এসেছে। তখন কীভাবে লোভ সামলাব?

সামান্য ৫ মার্ক ছাড়তে পারি না, ৫ লাখ টাকা ছেড়ে দেব- এমন আত্মবিশ্বাসী হওয়া ভালো না।
আসো, আল্লাহর জন্য এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোতেও মনোযোগ দিই। কুরবানি দিই। ইনশাআল্লাহ, ঈমানের কঠিন পরীক্ষা আসলে আমরা সেই পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে পাশ করব।


Posted

in

by

Tags: