রাত জাগা পাখি (২য় পর্ব)

ফজরে কীভাবে ঘুম থেকে উঠব?

ক) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারার পূর্বশর্ত হচ্ছে, রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া। এটা আমরা গত পর্বে আলোচনা করেছি। একজন মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য একটা ন্যুনতম পরিমাণ ঘুমের দরকার আছে। এই ঘুম পূরণ না হলে তোমার পক্ষে আসলে ফজরে উঠা সম্ভব না। হয়তো তুমি গভীর রাতে শুলে, এরপর ১০/১২ টা এলার্ম দিয়ে রেখে ফজরে উঠলে – কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো যে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারবে না। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থেকে নামায আদায় করেই আবার বিছানায় চলে যেতে চাইবে। তাই সকাল সকাল উঠার প্রথম শর্ত হচ্ছে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া।

খ) ঘড়ি বা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখা। চাইলে বেশ কয়েকটি এলার্ম দিয়ে রাখতে পারো। এবং ঘড়ি বা এলার্ম বিছানা থেকে দূরে রাখা। যেন তোমাকে এলার্ম বন্ধ করার জন্য বিছানা থেকে উঠতে হয়। একটু কষ্ট করে হেঁটে গিয়ে এলার্ম বন্ধ করতে হয়।

হলে বা মেসে থাকলে এভাবে মোবাইল বা ঘড়ি দূরে রাখাটা সম্ভব নাও হতে পারে। বিশেষ করে যদি তোমার রুমমেট এমন হয় যে, সে সকালে উঠতে ইচ্ছুক না এবং তোমার এলার্ম শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিরক্ত বোধ করবে। সেক্ষেত্রে বালিশের নিচে মোবাইল/ ঘড়ি রাখতে পারো। তবে তোমাকে একটু সতর্ক হতে হবে, যেন এলার্ম বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে না পড়ো।

ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাবার পূর্বে খেয়াল করে নাও, তুমি সবগুলো এলার্ম বন্ধ করেছ কিনা। না হলে দেখা যাবে, তুমি টয়লেটে বসে আছো, আর এদিকে এলার্ম বেজে তোমার রুমমেটের ঘুম ভেঙ্গে গেছে।

আরেকটা বিষয়, চার্জার লাইট বা টেবিল ল্যাম্প জাতীয় কিছুর ব্যবস্থা করে নিয়ো। ঘুম থেকে উঠে মেইন লাইট জ্বালিয়ে পড়াশোনা বা অন্য কাজ করলে তোমার রুমমেটের ঘুমের সমস্যা হতে পারে।[1]

ঘ) এলার্মে ঝাকানাকা টোন দিবে না। এমন টোন দিবে, যা প্রথমে আস্তে আস্তে বাজবে, এরপর দ্রুত হতে থাকবে। ঘুমের ঘোরেই একদম ঝাকানাকা টোনে ঘুম থেকে জেগে উঠলে তোমার মস্তিষ্ক, হার্ট ইত্যাদির ক্ষতি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই মাথাব্যাথা শুরু হয়।

ঙ) ঘুম ভাঙ্গার পর, ‘আর ৫ মিনিট ঘুমাই’—এই ফাঁদে পা দিবা না। ৫ মিনিট যে কখন ২ ঘণ্টা হয়ে যাবে, তা টেরও পাবে না। তোমার যদি আরও ৫ মিনিট বেশি ঘুমানোর ইচ্ছা করে, তাহলে রাতে ৫ মিনিট আগে ঘুমাও। ঘুম থেকে জাগার পর সঙ্গে সঙ্গেই উঠে বিছানা থেকে নেমে যাবে।

এভাবে চেষ্টা করতে থাকো। মাঝে মাঝে সফল হবে, মাঝে মাঝে ব্যর্থ। তবে চেষ্টা চালাতে থাকো। হতাশ হয়ে হাল ছাড়বে না। দেখবে, একসময় এটা তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ঘুম থেকে উঠার পর জেগে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কী করব? এ প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হবে পরের পর্বে ইনশাআল্লাহ।

‌[1] যদিও সকলেরই উচিত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা। তোমার রুমমেটকেও তুমি ফজরে ঘুম থেকে উঠার জন্য অণুপ্রাণিত করবে। তবে এই প্রসেসটা হবে দীর্ঘমেয়াদী। আর এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সে বিরক্ত বোধ করে।

[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply