এসএসসিতে মোটামুটি রেজাল্ট করে রাজশাহীতে একটা সরকারি কলেজে ভর্তি হই। কলেজের আশেপাশেই একটা মেসে উঠি। মেস লাইফ যে খুব একটা খারাপ, তা নয়। তবে সমস্যা হলো আমার লম্বা চুল। এই চুলের যত্ন একা নেওয়াই মুশকিল। মেসে এসে প্রথম চিন্তা এইটাই।
তবে বেশিদিন এই চিন্তা আমাকে করতে হয়নি। ২ মাসের মধ্যেই মাথার অর্ধেক চুল উঠে টাক পড়ার জো’। বাড়িতে যখন গেলাম মা তো আমাকে এক গাল বকা শুনিয়ে তারপর থামল। চুলের নাকি আমি যত্নই নিতে ভুলে গেছি। আমি মাকে এবার বোঝাই কী করে যে, দোষটা আমার না। দোষ হলো রাজশাহীর ওই আয়রনে ভরপুর পানির। পানি দেখলেই মনে হয়, ম্যানহোলের লাইন বোধহয় পানির সাথে যুক্ত।
আমার চুল উঠা যে এই পানি বাড়িয়েছে, তা শুধু নয়। আজকাল আমাকে দেখলে মনে হয়, আমি হয়তো কালোজাদু করি৷ কিংবা রাত হলেই তেঁতুল গাছে উঠে বসে থাকি।
মা আমাকে খানিক বকাবকি করে রাগ মিটিয়ে নিলো। এরপর আমাকে বলল, চুলটা ভালো মতো আচরে নিতে। আমি চুল আচরে এসে দেখি মা পেঁয়াজ কাটছে।
আমি: মা, পেঁয়াজ কেন কাটছো? কী রান্না করবে?
মা: কিছু রান্না করব না। তোর মাথায় দেবো।
– পেঁয়াজ?
– হ্যাঁ। পেঁয়াজ বেটে রসটা তোর চুলে দেবো। দেখবি, চুলের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
– না বাবা, থাক। চুল গন্ধ করবে।
– ভালোমতো ধুয়ে নিবি, কিছু হবে না। বস তো এখানে।
– আচ্ছা মা, পেঁয়াজের রস চুলে দিলে কী হয়?
– অনেক উপকারিতা আছে এটার।
– যেমন?
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
- চুলের ঘনত্ব ফিরিয়ে দেয়
- চুল পড়া কমায়
- চুলকানি কমায়
- সংক্রমণ কমায়
- চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে
- চুলের অকালপক্কতা রোধ করে
- চুলে খুশকির সমস্যা দূর করে
– তাহলে তো চুলের সব সমস্যার সমাধানই পেঁয়াজের রস। আমি ডেইলি ব্যবহার করব৷
– না, ডেইলি ব্যবহার করলে তোমার উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি।
– তাহলে শুধু একবার ব্যবহার করব?
কলিং বেলের শব্দে আমরা চমকে উঠলাম। এসময় অফিস থেকে বাবা আসে। আর এভাবে দুইবার পর পর কলিংবেল বাজায়। মা দরজা খুলতে চলে গেল। এখন বাবার সেবা-যত্ন করার জন্য মা অনেকক্ষণ ব্যস্ত থাকবে। কীভাবে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে হবে, তা জানার জন্য আমার আর তর সইছিল না। তাই, ফোন নিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম। যা পেলাম—
১/ একটি বড় পেঁয়াজ নিয়ে প্রথমে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
২/ এরপর সেটা পিষে পেস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে। চাইলে সরাসরি জুসারে দিয়ে পেঁয়াজের রসও বের করে নেওয়া যায়।
৩/ পেস্ট বা পেঁয়াজের রস একটি পাত্রে নিতে হবে। এরপর সেটি ভালোভাবে মাথার তালুতে লাগাতে হবে। আঙুলে সামান্য চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এই ম্যাসাজ তোমার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে। চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায়। বাকি রস চুলেও লাগিয়ে নিতে হবে।
৪/ ৩০ মিনিট ওভাবেই রাখবে। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলবে।
৫/ সপ্তাহে এক থেকে দু’বার পেঁয়াজের রস চুলে লাগানো যেতে পারে।
আরেকটা কথা। পেঁয়াজের রস ব্যবহারের আগে অবশ্যই অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিতে হবে। এ জন্য তুমি প্রথমে তোমার মাথার ত্বকের অল্প জায়গায় এটি লাগিয়ে রাখবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করবে না।
[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.