সাপে কামড়ানোর পর কী করতে হবে, তা আমরা অনেকেই জানি না। এই না-জানার ফলে অনেক সাপেকাটা রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তাই আমরা এ লেখায় আলোচনা করার চেষ্টা করব, সাপে কামড়ালে কী করতে হবে।
রাসেল’স ভাইপার কামড়ালে করণীয়:
১. ওঝা, কবিরাজ কিংবা বেদের নিকট না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
২. কোনো ধরনের শক্ত বাঁধন বা গিঁট দেওয়া যাবে না। সাধারণত দেখা যায়, হাত বা পায়ে কামড় দিলে কামড়ানোর স্থান থেকে উপরের দিকে দড়ি বা কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এতে হাত কিংবা পায়ে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্তপ্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পঁচন শুরু হতে পারে, যার ফলে আক্রান্ত অঙ্গ কেটেও ফেলা লাগতে পারে।
৩. বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপে কামড়ালে প্রথম ১০০ মিনিটের মধ্যেই এন্টিভেনম নিয়ে ফেললে রোগীর প্রাণ বাঁচানো অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
যেকোনো সাপে কামড়ালে সাধারণ কিছু দিকনির্দেশনা:
১. আক্রান্ত ব্যক্তিকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। তাকে বারবার আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে। বিষহীন সাপের কামড়ে আতঙ্কিত হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২. আক্রান্ত স্থান স্থির রাখতে হবে, নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে কামড়ালে বসে থাকতে হবে, হাঁটাচলা করা যাবে না। হাতে কামড়ালে হাত নাড়ানো যাবে না। নড়াচড়ার ফলে মাংসপেশির সংকোচনে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪. কামড়ানোর স্থানে ব্লেড, ছুরি দিয়ে কাটাকুটি করা, সুই ফোটানো কিংবা কোনো রাসায়নিক পদার্থ, মলম, ভেষজ ওষুধ, লালা, পাথর, গোবর, কাদা ইত্যাদি লাগানো যাবে না। আক্রান্ত স্থান থেকে চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করা যাবে না।
৫. আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
৬. ঘড়ি বা অলঙ্কার বা ব্যান্ড ইত্যাদি পরে থাকলে খুলে ফেলতে হবে।
৭. কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না। ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কিছু খাওয়ানো উচিত না।
সাপের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১। দুআ পড়া: রাসূল (সা.) বিষাক্ত প্রাণীর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের দুআ শিখিয়েছেন। আগের লেখাতেই আমরা এটা দেখেছি। আমরা এটি পাঠ করতে পারি।
২। ইকোসিস্টেম বজায় রাখা: শিয়াল, খাটাশ, বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, বনবিড়াল, মেছো বিড়াল, ঈগল ইত্যাদি প্রাণীগুলো ইঁদুর কিংবা সাপ খেয়ে এদের সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু ব্যাপক বন উজারকরণ ও এরকম বন্যপ্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা ও এদের আবাসস্থল ধ্বংস করার ফলে এরা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। যার ফলে আমাদের পরিবেশের খাদ্যশৃংখলা এবং ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য চরমমাত্রায় ব্যাহত হচ্ছে। ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাবার ফলে সাপের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে হত্যা ও আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩। সচেতনতা বৃদ্ধি: রাসেল’স ভাইপার সাপটি সাধারণত রাতে চলাচল করতে পছন্দ করে। এবং মানুষের বাড়িঘর এলাকায় সাধারণত এরা থাকে না। থাকার জন্য ঝোপ-ঝাড়, ফসলের গোলা কিংবা জমির বড় গর্ত এদের পছন্দ। তাই আমাদেরকে আমাদের ঘর-বাড়ি, আঙিনাকে পরিষ্কার, আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সাধারণত এসব সাপের কামড়ে ক্ষেত-খামারে কাজ করা কৃষকরা আক্রান্ত হন। তাই সুরক্ষার জন্য তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জমিতে কাজ করার সময় গামবুট বা মোটা রাবারের জুতো পরার প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
কোথাও সাপ দেখতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব রেসকিউ টিম কিংবা বন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার ফলেই হয়তোবা কারও না কারও প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]
রেফ্রারেন্স:
১/ https://bangla.thedailystar.net/life-living/food-health/news-506156
২/ https://www.youtube.com/watch?v=uX_qpf3tDFg
৩/ https://www.youtube.com/shorts/dEsOjOLsXEo
৪/ https://tinyurl.com/mu6cx3ve
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.