ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ভালো ছাত্র ছিলাম। এরপর কী যে হলো, সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেল। একের-পর-এক রেজাল্ট খারাপ হতে থাকল। ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষায় তিনটা সাবজেক্টে ফেইলই করে বসলাম। বাবা বলল আমাকে অটো কিনে দেবে… আর পড়াশোনা করাবে না। মা আমার পিঠে ঝাড়ু ভাঙ্গার আর পাশের বাড়ির মেহেদীর পা ধোয়া পানি খাওয়ানোর ইচ্ছা পোষণ করল। এ সময় আমার জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে হাজির হলো ফুপাতো ভাই হাসান। আমাকে বেশ কিছু টিপস দিলো সে। সেই টিপস ফলো করে এর পরের পরীক্ষাগুলোতে একের-পর-এক ছক্কা হাঁকাতে থাকলাম আমি। সেই টিপসগুলোই তোমাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে শেয়ার করছি আমি। গত পর্ব না পড়ে থাকলে পড়ে নাও দ্রুত।
স্মার্ট স্টুডেন্টের মতো যেভাবে পরীক্ষার খাতায় লেখবে
মূল পয়েন্টগুলো বলার পূর্বে তিনটি পয়েন্ট বলে নিই–
১/ কোনো জিনিস পড়ে ফেলার পর সঙ্গে সঙ্গে খাতায় সুন্দর করে লিখতে হবে।
২/ পরীক্ষার আগে বাসায় পরীক্ষার হলের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নেবে। খাতা বানাবে, মডেল টেস্টের প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করবে। এরপর ঘড়ি ধরে একদম পরীক্ষার হলে যেভাবে পরীক্ষা দিতে, বাসায় সেভাবে পরীক্ষা দেবে। প্রত্যেকটা প্রশ্নের জন্য সময় বরাদ্দ করে নেবে। ধরো, ১০ মিনিট বা ৫ মিনিট। ঘড়ি ধরে এই সময়ের মধ্যে প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। একটা প্রশ্নে অনেক বেশি সময় দিয়ে ফেললে পরের প্রশ্নগুলো ভালো করে লিখতে পারবে না। তখন নম্বর কম পাবে। যত বেশি মডেল টেস্ট দিতে পারবে, তত ভালোভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করতে পারবে।
৩/ পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো, খাতায় তোমার উপস্থাপনা এমন হতে হবে যেন স্যারদের খাতা দেখতে, পড়তে, নম্বর যোগ করতে সুবিধা হয়। স্যারেরা যদি তোমার খাতা দেখে আরাম পায়, তাহলে ধরে রাখো তুমি পরীক্ষায় অন্যদের চাইতে ভালো নম্বর পাবে।
এবার আসি মূল আলোচনায়-
১। পরীক্ষার খাতা দেবার পর খাতায় দেখবা নির্দেশনা দেওয়া আছে। কী করা যাবে, কী করা যাবে না। এগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
২। পরীক্ষার হলে কৃপণতা করবে না। তুমি পরীক্ষার ফি দিয়েছ। যত কাগজ লাগবে নিবে। চাপাচাপি করে, লাইন বা শব্দের মাঝে ফাঁকা জায়গা না রেখে, পিঁপড়ার মতো ছোট সাইজে লিখবে না। স্পষ্টভাবে, ফাঁকা জায়গা রেখে লিখবে। এতে স্যারদের লেখা পড়তে সুবিধা হবে। মন ভালো হবে। আর বুঝতেই পারছ মন ভালো হলে কী হবে।
৩। দুটি প্রশ্নের মাঝে একটু গ্যাপ রাখবে। একটা প্রশ্ন শেষ হবার পর নিচে একটা ছোট লাইন টেনে দিয়ে পরের প্রশ্ন থেকে আলাদা করে দিতে পারো। অনেক সময় স্যারেরা একটা প্রশ্ন থেকে অন্য প্রশ্ন আলাদা করতে পারেন না বেশি চাপাচাপি করে লিখলে। ফলে তুমি দুটি প্রশ্ন লিখলেও একটা প্রশ্নের নম্বর পাও।
৪। খাতায় সুন্দর করে মার্জিন টানবে। মার্জিনের বামপাশে কিছু লিখবে না।
৫। পরীক্ষার খাতায় কম কাটাকাটি করবে। ভুল হলে সেই ভুল লেখার উপর ঘষাঘষি না করে একটানে কেটে ফেলবে। তারপর নতুন করে লিখবে।
৬। প্রশ্নের উত্তর সিরিয়ালি লিখবে। ১ নং প্রশ্নের (সেটের) ক এর উত্তর লিখে আবার ২ নং প্রশ্নের (সেটের) খ এর উত্তর লিখে, এরপর ১ নং প্রশ্নের খ এর উত্তর; এভাবে লিখবে না। ১ নং প্রশ্নের আন্ডারে যতগুলো প্রশ্ন আছে (ক, খ, গ…) সব লিখে ফেলবে। এরপর ২ নং প্রশ্ন ধরবে। এভাবে সিরিয়ালি লিখে যাবে। স্যারদের খাতা দেখতে সুবিধা হবে। যদি ১ এর পরে ২ নং প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারো, তাহলে যেটা পারবে (৩/৪/৫ বা যেটা) সেটা লিখবে। কিন্তু সেই সেটের প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় তার আন্ডারে যত প্রশ্ন আছে সব একবারে লিখে ফেলবে। একটা সেট ধরলে সেই সেটের সব প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলবে।
৭। ধরো, ১ নং সেটের ক, খ, ঘ এর উত্তর পারো। গ এর উত্তর লিখতে একটু মাথা খাটাতে হবে। এখন লিখতে চাচ্ছো না। পরীক্ষা শেষের ঘণ্টা পড়ার আগে লিখবে। এমন হলে গ এর উত্তর লেখার জন্য আনুমানিক বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা রেখে দেবে। কিপটামি করে কম জায়গা রাখবে না। বেশি করে জায়গা রেখে দেবে।
৮। সিরিয়াল ঠিক রাখতে গিয়ে শুরুতেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবে না। আগে যেটা পারবে সেটার উত্তর দেবে। বাকিগুলোর জন্য ফাঁকা জায়গা রেখে দেবে । পরে লিখবে।
৯। পরীক্ষার হলে একটু আগে আগে যাবা। রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এগুলো মাথা ঠান্ডা করে লিখবা। এক্সট্রা কাগজ নিলে সবগুলোতে রোল নম্বর লিখবে এবং সিরিয়াল নম্বরও লিখতে হবে। ফলে কাগজের সিরিয়াল এলোমেলো হবে না।
১০। রাফ করার দরকার পড়লে খাতার একেবারে শেষ পৃষ্ঠায় রাফ করবে। প্রশ্নপত্রে, বেঞ্চে বা অন্য কোথাও রাফ করবে না। প্রয়োজনে এক্সট্রা কাগজ নিয়ে সেখানে রাফ করবে। সেলাই বা পিন মারার সময় এই কাগজও সঙ্গে দিবে কিন্তু। বাড়িতে নিয়ে যাবে না। যে যে কাগজে রাফ করেছ, তা খাতা জমা দেবার আগে একটানে কেটে দিবে।
১১। জেলজাতীয় কলম ব্যবহার করবে না। লেখা লেপ্টে যেতে পারে। পরীক্ষার হলে সাধারণত পেন্সিল, কালো বা নীল কালির কলম ছাড়া অন্য কালি দিয়ে লেখা যায় না। পরীক্ষা দিতে যাবার পূর্বে শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে নিবে কোন কোন কালির কলম ব্যবহার করা যাবে। ১ নং প্রশ্নের উত্তর, ক, খ, দুই সেট প্রশ্নের মাঝের নকশা ইত্যাদি নীল কালি দিয়ে লিখতে পারো। এতে প্রশ্নের উত্তরগুলো স্যারেরা সহজে আলাদা করতে পারবেন।
১২। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে বা কমন না পড়লে টেনশন করবে না। এই প্রশ্নের পেছনে সময় নষ্ট করবে না। টেনশন করলে বা সময় নষ্ট করলে বাকিগুলার উত্তরও ঠিকভাবে লিখতে পারবে না।
১৩। পরীক্ষার হলে পর্যাপ্ত কলম, পেন্সিল, স্কেল, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর নিয়ে যাবে। সঙ্গে স্যারদের অনুমতি নিয়ে পানির বোতল, বিস্কুট, কলা, কেক ইত্যাদি রাখতে পারো। পরীক্ষার মধ্যে পেটে খাবার থাকলে মাথা ভালো কাজ করবে। দ্রুত লেখার শক্তিও পাবে।
১৪। সব প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করবে। পুরোটা না পারলেও কিছুটা এগিয়ে দিয়ে আসবে, স্যারেরা যেন নম্বর দেবার জায়গা পায়।
স্যাম্পল খাতা
১ নং প্রশ্নের উত্তর[1]
(ক)
আমার নাম আব্দুল্লাহ।
(খ)
আমার নাম আব্দুল্লাহ। আমি একজন ছেলে।
(গ)
[যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রেখেছি। পরে লিখব।]
(ঘ)
আমার নাম আব্দুল্লাহ। আমি একজন ছেলে। আমি ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবো। ইত্যাদি ইত্যাদি।
***
২ নং প্রশ্নের উত্তর
(ক)
আমার নাম নাওয়ার।
(খ)
আমার নাম নাওয়ার। আমি একজন মেয়ে।
(গ)
আমার নাম নাওয়ার। আমি একজন মেয়ে। আমি আমার আব্বুর খুব আদরের মেয়ে।
(ঘ)
আমার নাম নাওয়ার। আমার ছোট ভাইয়ের নাম ফারিস। আমরা মুসলিম। আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। আমাদের জীবনের চেয়েও বেশি।
[1] নীল কালি দিয়ে অথবা কালো কালি দিয়ে লিখে নীচে নিল কালি দিয়ে দাগ দেবে।
[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]