আফ্রিকার দেশ মিশর।[1] আব্দুল্লাহ নামের একজন অনেকদিন ধরেই কঠিন অসুখে ভুগছিলেন। স্থানীয় ডাক্তারকে দেখানো হলো। তিনি পরামর্শ দিলেন- আপনি জার্মানিতে যান। সেখানে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন। কিছুদিনের মধ্যেই আব্দুল্লাহ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জার্মানিতে গেলেন। সেখানে এক নামকরা ডাক্তারের কাছে চেকআপ করালেন। ডাক্তার শরীরের অবস্থা দেখে তক্ষুনি আব্দুল্লাহকে অপারেশন করার কথা বলল। ডাক্তার আরও বলল- অপারেশনে আপনি মারাও যেতে পারেন।
আব্দুল্লাহর স্ত্রী ও সন্তানের কথা খুব মনে পড়ল। অপারেশন করার আগে একবার তাঁদের দেখতে মন চাইল। তিনি ডাক্তারকে বললেন- আপনি সবকিছু রেডি করে রাখুন। আমি আগে একবার মিশরে যাব আর আসব। একবার স্ত্রী আর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করে আসি।
দ্রুত মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন আবদুল্লাহ। রাস্তায় এমন এক দৃশ্য দেখলেন যা তাকে নাড়া দিল প্রবলভাবে। তিনি দেখলেন কসাইখানার পাশে এক মহিলাকে ফেলে দেওয়া মাংসগুলো কুড়িয়ে নিতে। কৌতুহলী ও বিস্মিত আব্দুল্লাহ মহিলার কাছে এগিয়ে গেলেন।
– আপনি কসাইয়ের ফেলে দেওয়া মাংসগুলো কেন নিচ্ছেন?
– দেখুন, এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আমার ছেলেরা দুই বছর হলো মাংস খেতে পায়নি। মাংস কেনার মতো টাকাও আমার নেই৷
মহিলার কথা শুনে আব্দুল্লাহ প্রচণ্ড কষ্ট পেলেন। কসাইকে ডেকে নিলেন একপাশে।
– এই যে নিন এ টাকাগুলো। এখানে একবছরের টাকা রয়েছে। আপনি এই ভদ্রমহিলাকে প্রতি সপ্তাহে উনার চাহিদামাফিক মাংস দেবেন।
কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে আসল অসহায় মহিলাটির। দু’হাত তুলে আব্দুল্লাহর জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণভরে দুআ করলেন তিনি।
আব্দুল্লাহ বাড়ি পৌছালেন। স্ত্রী-সন্তানদের তাঁর শরীরের অবস্থার ব্যাপারে সব খুলে বললেন। তাঁর স্ত্রী বললেন-
– আপনি ভয় পাবেন না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
আব্দুল্লাহ সবার থেকে দুআ নিয়ে জার্মানিতে ফিরে গেলেন। অপারেশন করার আগে ডাক্তাররা আরেকবার চেকআপ করতে চাইল। চেকআপ করার পর অবাক হয়ে গেল তারা।
– আরে! এ কী করে সম্ভব! আপনি তো একদম সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। আপনার শরীরে তো অসুখের চিহ্নমাত্র নেই!
আব্দুল্লাহর চোখেমুখে হাসির ঝিলিক খেলে গেল। তিনি বললেন- এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে সবচেয়ে বড় ডাক্তারের মাধ্যমে। তিনি আর কেউ নন, এই সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহ। মিশরে ফেরার পথে এক অসহায় মা অন্তর থেকে আমার জন্য দুআ করেন। মহান আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করেছেন। আমাকে এই কঠিন অসুখ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
বিপদাপদে সাহায্য করলে আল্লাহ অত্যন্ত খুশী হন। কারও বিপদ দেখলে আমরা অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। টাকাপয়সা দিয়ে, হাসিমুখে সুন্দরভাবে কারও সঙ্গে কথা বলে, সাহস জুগিয়ে, বিপদ দূর করার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করে… যে যেভাবে পারি সাহায্য করব। হয়তো পুরো বিপদ দূর করতে পারব না। কিন্তু যতটুকু পারি, আমার পক্ষে যতখানি করা সম্ভব, করতে পিছপা হব না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি ﷺ বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয়স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন।’[2]
[1][1] সত্য ঘটনা অবলম্বনে- https://www.youtube.com/watch?v=MG3jGHnBVQs&feature=youtu.be
[2] আবু দাউদ, : ৪৯৪৬