লাঠিপেটা

তিন তলা বাড়ির নিচতলা। ঘড়িতে সময় ১টা ৩০ মিনিট। 

বাড়ির সবাই ঘুমে বিভোর। হঠাৎ জেগে উঠল সজীব। দোতলায় কে যেন হাঁটছে। কিন্তু দোতলায় তো এখন  কেউ  নেই।  তালা মেরে  প্রায়  দুই সপ্তাহ আগে স্বপরিবারে গ্রামে ঘুরতে গেছে বাড়িওয়ালা। এখন তো তার আসারও কথা না। ভয়ে ভয়ে সে ঘরের লাইট জ্বালাল। মা-বাবা ও দুই বোনকে ডেকে তুলল সজীব।

সজীব : বাবা! বাবা! শোনো, কে যেন দোতলায় হাঁটছে।

বাবা চোখ ডলতে ডলতে বললেন, ‘এত রাতে দোতলায় কে হাঁটবে? বাড়িওয়ালা তো ফেরেনি গ্রাম থেকে।’

মা : এই শোনো, অনেকদিন তো হয়ে গেল দোতলা তালাবদ্ধ। ভূত-টূত আবার আস্তানা করেনি তো!

‘ভূত, ভূত’ করে চিৎকার করে বাবার কোলে গুটিশুটি মেরে বসল ছোটবোন মিমি।

মিমিকে ধমক দিয়ে বড়বোন সুমি বলল, ‘মিমি, চুপ থাক; চোর হলে কিন্তু গলা শুনে পালিয়ে যাবে।’

মিমি : চোওওর!

সুমি : আবার!

সজীব : বাবা, এভাবে বসে থাকলে তো হবে না, কিছু একটা করো।

বাবা : হুম।

মা : এই যা, কারেন্ট চলে গেল যে!

এবার সুমি ভয়ে লাফ দিয়ে খাটে চড়ে বসল।

মিমি : হ্যাঁ, তুই শুধু আমাকে ভিতু বলিস; এখন দেখ তুই কত ভিতু।

সুমি : মিমি… কারেন্টটা শুধু আসতে দে।

মা : আরে, বন্ধ করো তোমাদের ঝগড়া।

বাবা : আমার মনে হয় তিনতলার ভাইকে ফোন করে বিষয়টা জানানো উচিৎ।

তিনতলার আঙ্কেলের সাথে কথা বলে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি, সজীব এবং আঙ্কেল মিলে দোতলায় যেয়ে দেখবেন কী হচ্ছে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনজনই লাঠি ও টর্চ হাতে খালি পায়ে নিঃশব্দে দোতলায় এলো ঘটনা তদন্ত করতে।

বাবা ফিসফিস করে বললেন, ‘এই সজীব, খবদ্দার এখন আলো জ্বালাবি না।’

সজীব বলল, ‘আচ্ছা।’

আঙ্কেল বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ভাই, দেখেন দরজার তালা খোলা। মনে হচ্ছে তালা ভেঙেছে।’

বাবা আস্তে করে দরজাটি টেনে ধরলেন। ভেতরে উঁকি দিলেন। শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ আকাশে। সেখান থেকে হালকা আলো আসছে। এই আলোতে বাবা দেখলেন ভেতরে কে যেন কিছু একটা খোঁজাখুঁজি করছে।

আঙ্কেল : এ তো মনে হচ্ছে চোর!

বাবা : সজীব, তুই দরজার পেছনে দাঁড়া। আমি আর তোর আঙ্কেল চোরটাকে ধরার চেষ্টা করব। সে এদিকে পালিয়ে আসলে তুই ওকে লাঠি দিয়ে আঘাত করবি।

সজীব : ওকে।

বাবা ও আঙ্কেল দ্রুতপদে এগিয়ে গেল। আঙ্কেল লোকটিকে পেছন থেকে জাপটে ধরলেন। আর বাবা লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগলেন।

লোক : ওরে বাবা… বাঁচাও।

বাবা : চুরি করতে এসেছিলি কেন?

লোক : ভাআই… ভাআই…থামেএএন।

বাবা : এখন ভাই ডেকে কাজ হবে না।

এমন সময় হঠাৎ কারেন্ট চলে এলো। ঘরের বাল্বটি জ্বলজ্বল করতে লাগল।

আঙ্কেল : এ কী! এ যে আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে রবিন!

বাবা : এত রাতে আপনি এভাবে চোরের মতো ঢুকেছেন কেন? আপনার বাবা আসলে তো আমাদের ফোন করেন।

রবিন : ফোন করেছিলাম। লাইন পাইনি। মহাখালীর নেটওয়ার্ক টাওয়ার পুড়ে গেছে, জানেন না? রাত ১০ টা থেকে সারাদেশে যোগাযোগ বন্ধ। ১ টার পর নেটওয়ার্ক এসেছে। আমি ততক্ষণে এ বাসার গেইটে।

বাবা : কিন্তু আপনার একা আসার কারণ কী?

রবিন : আজ রাত ১১ টার দিকে আব্বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ডাক্তার বেশ কিছু পরীক্ষা ও দামী ওষুধ দেন।

আঙ্কেল : এখন তার কী অবস্থা?

রবিন : এখন তিনি বেডরেস্টে আছেন। তার আজ রাতেই কিছু ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। ওষুধগুলো বেশ দামি। আমাদের হাতে এত টাকা ক্যাশ নেই। ব্যাংক কার্ডও সঙ্গে নেই। তাই, আব্বা আমাকে বাসায় টাকা নিতে পাঠিয়েছেন।

বাবা : ওওও… আচ্ছাআআ, তাহলে এই ব্যাপার! কিন্তু আপনি আমাদের ডাকলেন না কেন?

রবিন : এত রাতে আপনাদের ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙাতে চাইনি।

আঙ্কেল : তাই তো আপনার আজ এই দশা হলো।

সজীব (নীচু স্বরে) : ভাগ্যিস, কারেন্টটা এসেছিল! নাহলে বাড়িওয়ালার সাথে তার ছেলেকেও মেডিকেলে ভর্তি করাতে হতো!

[ষোলো ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত]


Posted

in

by

Tags: