অমীমাংসিত রহস্য সিরিজ (১ম পর্ব)

সৈকতে পাওয়া লাশের মৃত্যুরহস্যের জট খোলেনি ৭৫ বছরেও

১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর। এক তারিখ সকাল।

অস্ট্রেলিয়ার এডিলেইডে সমারটন সৈকতে এক ভদ্রলোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। একদম অক্ষত একটি মৃতদেহ, আঘাতের চিহ্নমাত্র নেই। লোকটি একেবারেই পরিপাটি সুবেশী, কিন্ত তার কোনো কাপড়েই লেবেল লাগানো নেই। পকেটে ছিল হেনলি বিচে যাওয়ার একটি অব্যবহৃত ট্রেন টিকেট। তার প্রায় এক মাস পর এডিলেইড রেলস্টেশনে একটি মালিকবিহীন স্যুটকেস পাওয়া গেল। স্যুটকেসটিতে এবং এর ভেতরে থাকা কাপড়গুলোতেও কোনো লেবেল নেই। এটার ভেতরে রয়েছে অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস- স্ক্রু ড্রাইভার, দড়ি, ছুরি, কাচি ইত্যাদি। পুলিশ ভেবেছিল এই স্যুটকেস থেকে তারা খুনের বেশ কিছু ক্লু পাবে। কিন্তু হতাশ হতে হয় তাদেরকে। স্যুটকেস থেকে বিশেষ কোনো ক্লু পাওয়া গেল না। আবার লাশের ময়নাতদন্ত করেও শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। তদন্তকারীদের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাবার মতো অবস্থা। কিন্তু এরপর হুট করে আবিষ্কৃত হলো একটি বিষয় যা ঘুরিয়ে দিল তদন্তের মোড়।

লোকটির প্যান্টের ভেতরের গোপন পকেটে পাওয়া গেল কোনো বই থেকে ছেড়া এক টুকরো কাগজ। তাতে লেখা- তামাম শুদ!

কথাটির অর্থ কী? জাতীয় গ্রন্থাগার কর্মীদের শরণাপন্ন হলো পুলিশ। তারা জানাল এর অর্থ সমাপ্তি বা শেষ। এই কথাটি রয়েছে রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম কবিতা সংকলন বইতে। কোন বইটি থেকে সেই কাগজের টুকরোটি ছেঁড়া হয়েছে তা বের করার জন্য পুলিশ ব্যাপক আকারে সার্চ অপারেশন শুরু করল।

এক ব্যক্তি যোগাযোগ করল পুলিশের সঙ্গে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে সে জানাল- আমার গাড়ির পেছনের সিটে কেউ একজন রেখে গিয়েছে এই বইটা।

কবে? ঠিক মনে আছে আপনার সেদিন কয় তারিখ ছিল?

ঠিক মনে নেই। তবে লাশ পাবার দুই বা এক সপ্তাহ আগে হবে হয়তো। … না মৃতব্যক্তির সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। তাকে জীবনেও দেখিনি।

পুলিশ দ্রুত বইটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। বইয়ের পেছনের পাতায় কিছু অদ্ভুত দাগাদাগি করা ছিল। তদন্তকারীরা যাকে সাংকেতিক বার্তা মনে করে। আর ছিল একটা ফোন নম্বর। ফোন করা হলো সেই নম্বরে। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হলো- আমি একজন নার্স। আমার নাম জেসিকা। রুবাইয়াৎ- ই-ওমর-খৈয়ামের বইটির একটি কপি আলফ্রেড বক্সালকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম। আলফ্রেড কী করে…? ও আর্মি অফিসার। কী যে এক বিপদে পড়লাম। আমার নম্বর কেন ওই বইতে লেখা! আমি ওকে বাপের জন্মেও দেখিনি।

পুলিশ ধরে নিলো মৃত লোকটা মনে হয় আলফ্রেড বক্সাল। মৃত্যুরহস্যের কূল কিনারা বোধহয় এবার হবে। কিন্তু তিন দিনের মাথায় তারা খুঁজে পেল জীবিত আলফ্রেড বক্সালকে। তাহলে আলফ্রেড বক্সালই কি খুনি? কারণ, তার বই থেকেই ছেড়া পৃষ্ঠা পাওয়া গিয়েছে স্যুটকেইসে।

পুলিশদের হতবাক করে দিয়ে আলফ্রেড জেসিকার উপহার দেওয়া সেই বইটি বের করে দেখাল। বইয়ের সবপৃষ্ঠা অক্ষত। শেষ পৃষ্ঠায়, জেসিকা যেমন জানিয়েছিল, জেসিকার নাম লেখা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আলফ্রেডের রুবাইয়াৎ- ই-ওমর-খৈয়াম আর গাড়ির ব্যাকসিটে খুঁজে পাওয়া রুবাইয়াৎ- ই-ওমর-খৈয়ামের সংস্করণ আলাদা।

অনেকেই বলে নার্স জেসিকাই খুনি। অনেকেই দাবি করে- এটি আত্মহত্যা। কারণ বইটির মূল উপজীব্য ছিল- মৃত্যুর সময় অনুতাপ না রাখা। আবার কেউ মনে করে সেই লোকটি ছিল কোনো গুপ্তচর। এই রহস্যের আর কোনো সমাধান হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তামাম শুদের এই অমীমাংসিত রহস্য সমাধানের চেষ্টা সম্প্রতি শুরু হয়েছে। তবে আদৌই মৃত্যুরহস্যের সমাধান হবে কি না কে জানে! লাশ আবিষ্কারের প্রায় সাড়ে ৭ মাসের মাথায় ১৪ জুন, ১৯৪৯ সালে কবর দেওয়া হলো লোকটিকে। সমাধির ফলকে লেখা হয়- এখানে শায়িত আছেন সমারটন সৈকতে ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ সালে পাওয়া এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি!


Posted

in

by

Tags: