বর্তমানে আমাদের দেশে বহুল আলোচিত, প্রাণঘাতি ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। চলো, শুরু করা যাক।
ডেঙ্গু জ্বর হলো এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর জীবাণু দ্বারা সংঘটিত একটি রোগ। এই রোগের প্রথম ধারণা পাওয়া যায় ২৬৫-৪২০ সালে চীনা বিশ্বকোষে। তবে ১৭৭৯ সালে রাশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা এই রোগের কারণে মহামারির কবলে পড়েছিল।
বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমণের উচ্চ হার লক্ষ করা যায় বর্ষাকালে, শহর ও উপশহর এলাকার জনগোষ্ঠীতে।
কিছু বিষয় জেনে নিই
এডিস মশা : স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক। এরা যখন মানুষকে কামড়ায় তখন ত্বকের মাধ্যমে জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। এডিস মশা ডোরাকাটা দাগযুক্ত। এরা ৪-৫ দিনের স্বচ্ছ জমানো পানিতে ডিম পাড়ে। এডিস মশা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়।
রোগ লক্ষণ ও ধারাবাহিকতা : ভাইরাস দেহে প্রবেশের পর ৪-৭ দিনের মধ্যে রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়। উপসর্গগুলো ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গহীন থাকে।
প্রথম ৫ দিন :
√ উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, যা প্রায় ১০৪° ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
√ শরীরে কাঁপুনি, তীব্র মাথাব্যথা, চক্ষুকোটরের পেছনে ব্যথা।
√ হাড়ের জোড়ায় বা গিঁটে এবং মাংসপেশিতে ব্যথা। প্রবল ব্যথার কারণে একে হাড়ভাঙা জ্বরও বলা হয়।
৫-৭ দিন :
এক্ষেত্রে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। এসময় যা হতে পারে—
√ নাক, মাড়ি, দাঁত হতে রক্তপাত, মলের সঙ্গে রক্তপাত।
√ নাড়ি দুর্বল ও হৃদস্পন্দন দ্রুত। রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
√ রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। রোগী শকে চলে যায়।
রক্তে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া জটিলতার লক্ষণ। প্লাটিলেট প্রতি মিলিমিটারে ২০,০০০ এর চেয়ে কমে গেলে বা হেমাটোক্রিট-এর মান বেড়ে গেলে তা মারাত্মক জটিলতা নির্দেশ করে।
চিকিৎসাব্যবস্থা :
ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। ৭ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে চিকিৎসা করে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। জ্বর লাঘবে প্যারাসিটামল, পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং বেশি বেশি তরল খাবার পানীয় যথেষ্ট।
তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও রোগী অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনে রক্ত বা প্লাজমা সঞ্চালন করতে হবে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ICU তে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রতিরোধই সমাধান :
ডেঙ্গুর স্বীকৃত কোনো টিকা নেই, এন্টিভাইরাল কার্যকর নয়। অতএব প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। এক্ষেত্রে যে পদক্ষেপসমূহ নিতে হবে—
১. মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা, ফুলের টব, ডাবের খোসা, ক্যান, গাড়ির টায়ার, গর্ত ইত্যাদি স্থানে যেন পানি না জমে সেদিকে নজর রাখা।
২. মশক প্রজননের স্থানে কীটনাশক ও ঘরে মশা তাড়ানোর রিপেলেন্টস ব্যবহার করা।
৩. দিনের বেলা এবং রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা।
৪. সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে নিচের দুআ পাঠ করা[1]
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(উচ্চারণ : আউযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক)
এর অর্থ হলো, আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।
পরিশেষে বলা যায়, সবার সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রাণঘাতি এ রোগ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি। মহান আল্লাহ তাআলা এ প্রচেষ্টায় আমাদের সহায় হোন। আমীন।