ইনজেকশনে আমার খুব ভয় করে। কিন্তু এই কয়দিন আগেই ইনজেকশন দিতে হলো। অসাবধানে পা দিয়ে বসেছিলাম এক কুকুরের গায়ে। আর যায় কোথায়। সঙ্গে সঙ্গে দিল কামড়। এরকম অসাবধানতাবসত কামড় অনেককেই খেতে দেখেছি। বিড়ালের কামড়, কুকুরের কামড়, এমনকি সাপের কামড় পর্যন্ত।
ইনজেকশন দেবার সময় আমার ভয় পাওয়া দেখে ডাক্তার হো হো করে হেসে উঠল।
‘আরে, পুরুষ মানুষ হবে বাঘের মতো, ভয়ডরহীন। এমন করলে হবে!’ ইনজেকশন দিতে দিতে বললেন উনি।
হাতে স্টিচ বেঁধে নেবার পর আমার আতঙ্ক কিছুটা কমল। এতক্ষণ মনে মনে ডাক্তারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছিলাম। এবার একটু ভালো করে তার দিকে তাকালাম।
ডাক্তারের বয়স একেবারেই অল্প। কেবল পাশ করে বের হয়েছে মনে হয়। একমাথা চুল, গালে সুন্দর দাড়ি। নূরানি চেহারা যাকে বলে। হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনার চেহারা দেখে আমার রাগ কিছুটা কমল।
– বুঝছ, তুমি যদি একটা দুআ জানতে, তাহলে কিন্তু আর এই ইনজেকশন দেওয়া লাগত না!
– দুআ!?
– হ্যাঁ, দুআ!
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(উচ্চারণ : আউযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক)
এর অর্থ হলো, আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।
– এই দুআ পড়লেই হবে?
– হাদীসে তো এমনই এসেছে। আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই দুআ তিনবার পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত প্রাণী, বিশেষ করে সাপ, বিচ্ছু প্রভৃতি বিষাক্ত ও কষ্টদায়ক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।’[1]
তার মানে আবার এমন না যে, তুমি গোখরা সাপের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে—সাহস থাকলে কামড় মার!
চেম্বারে অন্য রোগী ঢুকছে। বের হবার আগে পিঠে একটা স্নেহের চাপড় অনুভব করলাম। ডাক্তার ভাইয়া হাসিমুখে বিদায় জানালেন আমাকে। ভালো থেকো, চ্যাম্প! হাসপাতালে আর যেন দেখা না হয়!
[1] তিরমিযি, আস-সুনান, হাদীস নং : ৩৬০৪