শুক্রবার বিকালের দিকে খুব জরুরি একটা কাজ পড়ে গেল। মাগরিবের সালাতের আগে আগে। হন্তদন্ত হয়ে বের হলাম বাসা থেকে। দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম ব্যস্ত ফুটপাত ধরে। ফুটপাতের পাশের ফাস্টফুডের দোকানগুলোও হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফুটপাতের অর্ধেকটা জুড়ে। হঠাৎ খেয়াল করলাম, এমনই এক দখলদার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের বাসার ছোট ভাই সোহাগ। পাঞ্জাবি পরে সেই মাঞ্জা টাঞ্জা মেরে আছে। অথচ দুপুরে সালাত পড়তে গিয়েছিল ফুটপাতের একশ টাকার টিশার্ট আর লুঙ্গি পরে। ও আমাকে অনেক আগেই দেখেছে। এবং দেখেই দোকানের মধ্যে ঢুকে যেতে চাচ্ছিল। ব্যাপার কী? এমন রহস্যময় আচরণ কেন?
ধরলাম ওকে চেপে। কী মিয়া, এখানে কী? মাঞ্জা মেরে কই যাও?
আমি ওকে এভাবে দেখে ফেলব ভাবেনি সে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিছুক্ষণ তোতলামি করল। এরপর মিনমিন করে বলল, ‘না, ভাই। এই যে মাগরিবের সালাত আদায় করতে যাব।’
যা বোঝার বুঝে ফেললাম আমি। পিঠে একটা চাপড় দিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম, ‘রাতে কথা হবে, ভাইয়া!’
রাতে বাসায় ফিরে দেখি সোহাগ এখনো বাসায় আসেনি। পাশের রুমে গেলাম আড্ডা দিতে। সেই হাসাহাসি করছে ঐ রুমের ওরা।
– কাহিনি কী? এত হাসির কি হয়েছে, আমাকেও একটু বলো। আমিও হাসি!
ওরা কাহিনি বলা শুরু করল—
সোহাগের রুমমেট দুইজন এঞ্জেল সাদিয়া টাইপের একটা ফেইক আইডি খুলেছিল মাস ছয়েক আগে। অনলাইন থেকে পাওয়া এক মেয়ের ছবি ক্রমাগত আপলোডের মাধ্যমে ফেইক আইডিকে একেবারে বিশ্বাসযোগ্য রক্ত মাংসের মানুষের আইডি বানিয়ে ফেলে। এরপর সোহাগের একটা পোস্টে লাইক দেয়। হরমোনের লাভায় টগবগ করে ফোটা সোহাগ তৎক্ষণাৎ সেই আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। এরপর যা ভাবছ তাই। টেম্পু চালানো শুরু। এই ছয় মাস সোহাগের কাছ থেকে হাজার দুয়েক টাকার মতো নিয়েছে ওরা বিকাশে। গিফট কেনার জন্য। সোহাগ বহু আবদার করেছে ফোনে কথা বলার। ভিডিও কলে আসার অনুরোধ করেছে। দেখা করার কথা তো বলত দিনের মধ্যে কয়েকবার করে। কিন্তু ওরা রাজি হয়নি। ছয়মাস খেলার পর ওদের মনে হলো, যাক যথেষ্ট খেলা হলো, এবার ফাইনাল একটা মজা নিয়ে খেলা শেষ করা যাক।
আজকে দুপুরে সালাতের কিছু পর সোহাগকে ওরা বলে, ‘বাবু, অমুক এলাকায় আসো। আজকে তোমার সাথে দেখা করব।’
সোহাগ সেজেগুজে মাঞ্জা মেরে বের হয়ে যায় ঝড়ের গতিতে। ওরা সোহাগকে প্রথমে একটা জায়গায় আসতে বলে, এরপর সেখানে গেলে বলে অন্য এক জায়গায় আসতে। এভাবে পুরো শহরের অর্ধেক ঘুরানোর পর সোহাগকে ব্লক করে ফেইক আইডিটা বন্ধ করে দেয় ওরা।
গভীর রাতে সোহাগ বাসায় ফিরে। ক্লান্ত, হতাশ, বিদ্ধস্ত হয়ে। ওর সাথে প্রথমে বেশ মজা নেয় বাসার সবাই। এরপর সত্যটা জানায় ওকে। বেচারার মুখের অবস্থা দেখে বেশ খারাপই লেগেছিল।
অল্পের ওপর দিয়ে সোহাগ পার পেয়ে গেলেও সবার কপালে এমন হয় না। অনলাইনের প্রেমে মারাত্মকভাবে ধরা খেয়ে চরম মাশুল গুনতে হয় অনেকের। কত মানুষ যে মাইনকা চিপায় পড়ে তার ইয়ত্তা নেই। টাকাপয়সা, ধন-সম্পদ, মান-সম্মানের পাশাপাশি জীবনটা পর্যন্ত হারায়। সেই সাথে আরও অনেক ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে, যা একটা পরিবারকে পর্যন্ত শেষ করে দেয়।[1] কাজেই সাধু সাবধান।
তোমাদের এখন জীবন গড়ার সময় ভাইয়া, আপু। এ সময় তথাকথিত প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়ে এ জীবন ও ওপারের জীবনটা নষ্ট কোরো না। বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ো না।
ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।
[1] বিস্তারিত জানার জন্য পড়তে পারো ইলমহাউস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত আমাদের ‘আকাশের ওপারে আকাশ’ বইটি।