লেখালেখি নিয়ে লেখালেখি (শেষ পর্ব)

[১ম পর্ব পড়ে নাও এখান থেকে]

সহজ কথা বলতে হবে সহজে

শিরোনামে যদিও বললাম যে, সহজ কথাই সহজে বলতে হবে, কিন্তু বিষয়টা শুধু এমন না। চেষ্টা করতে হবে যাতে সবগুলো কথাই সহজ ভাষায়, আরামসে বলা হয়। আমরা প্রথম পয়েন্টে বলেছি অনেক অনেক পড়তে হবে, তাহলে আমরা লিখতে শিখব। এখন এমন হতে পারে যে, আমরা এমন কোনো লেখকের লেখা পড়লাম, যিনি লিখেন অনেক কঠিন ভাষায়। কিংবা যার লেখার বিষয় হচ্ছে বেশ ভারিক্কি। আমরা যদি তখন সেভাবে লিখতে শুরু করি, তাহলে তো মুশকিল!

একটা উদাহরণ দিই, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে ইনশাআল্লাহ। ধরো, আমরা দেখছি যে, কেউ খেতে বসেছে বা খাচ্ছে। তো আমরা বিষয়টাকে কীভাবে লিখব?

১। লোকটি খেতে বসেছে/লোকটি খাচ্ছে।

২। সে এখন খাবে/সে খাচ্ছে।

৩। মানুষটি খেতে বসল/মানুষটি এখন খাবে/মানুষটি এখন খাচ্ছে।

ওপরের যেকোনো একভাবেই কথাটি বলা যেতে পারে। কিন্তু যদি আমরা ওপরের উদাহরণের মতো না বলে এভাবে বলি—

লোকটি/মানুষটি/সে খাদ্যগ্রহণ করতে চেয়ারে বসল।

অথবা,

লোকটি/মানুষটি/সে ক্ষুধা নিবারণ করতে বসল। 

কেমন লাগছে, বলো তো? খুব ওজনদার, তাই না? এভাবে না বলে খুব সহজ ভাষায় ঘটনাটা আমরা লিখে ফেলতে পারি। 

তোমার লেখা মানুষ যত সহজে বুঝবে, যত সহজে তোমার কথা মানুষকে তুমি বুঝাতে পারবে, তত বেশি তোমার লেখা মানুষের কাছে ভাল্লাগবে। আমরা এরকম লেখার জন্য একটা নাম ব্যবহার করে থাকি—মেদহীন লেখা। মানে লেখার মধ্যে কোনো তেল-চর্বি-ভুঁড়ি নেই। একদম ঝরঝরে, ফ্রেশ! তরতর করে পড়ে ফেলা যায়।

তাই ভাইয়ারা ও আপুরা, এসো আমরা চেষ্টা করতে থাকি, কীভাবে সহজ সব শব্দে সহজে নিজের মনের কথাগুলো লিখে ফেলা যায়। সহজিয়া লেখা মানুষের মনে দাগ কাটে বেশি। যদিও সহজ কথা যায় না বলা সহজে, কিন্তু লিখতে লিখতে আর চেষ্টা করতে করতে যে আমরা এই চমৎকার গুণটি আয়ত্ত্ব করে ফেলতে পারব না, সেটা কি কেউ বলেছে না কি?

আর কেউ বললেই কী! আমরা সেসবকে থোড়াই কেয়ার করি। অতএব, নেমে পড়ো লেখার ময়দানে খাতা-কলম-কীবোর্ড নিয়ে আর লিখতে থাকো নিজের কথাগুলো। লিখো আর পড়ো। দেখো, সেটা পড়তে সহজ লাগে কি না, তরতরিয়ে পড়ে ফেলা যায় কি না। যদি না যায়, তবে আবার চেষ্টা করো। এভাবে করতে থাকলে দেখবে, ইনশাআল্লাহ ইনশাআল্লাহ লেখা বাবাজি সুন্দর হবেই হবে। সুন্দর না হয়ে যাবে কই ব্যাটা, হু?

যে মালী তার বাগানে যত যত্নের সঙ্গে, সময় নিয়ে কাজ করবে, তার বাগান তত সুন্দর হবে—এটা তো আমরা সবাই-ই বুঝি। বুঝি কি না? অবশ্যই বুঝি। আমাদের লেখার খাতা ঠিক সেরকমই এক বাগান। যত খাটবে, যত সময় দেবে, তত বেশি ফুলেফুলে ভরে উঠবে তোমার এই বাগান। মৌ মৌ করে ঘ্রাণ ছড়াবে ফুল। সেই সুবাসে সুরভিত হবে আশেপাশের সবাই, সুরভিত হবে তুমি নিজেও।

তো বন্ধুরা, অনেএএএক বকবক করে ফেললাম। তোমরা আবার রাগটাগ কোরো না যেন! ষোলোতে তোমাদের লেখা বেশি বেশি আসুক, তোমাদের লেখার সুরভিতে ষোলো সোল্লাসে মেতে উঠুক। এত বেশি লেখা আসুক তোমাদের, যাতে করে তোমাদের সেই সেই সব লেখার ভিড়ে হারিয়ে যায় আমাদের এসব পঁচা বকবকানি আর বোরিং বোরিং সব লেখা। তোমাদেরই পথ চেয়ে আছে ষোলো, চেয়ে আছে পুরো উম্মাহ। তোমরা সাড়া দিচ্ছ তো?


by

Tags: