শান্তি পাব কোথায় গিয়ে?

অনেক সময় আমাদের মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠে। কোথাও শান্তি খুজে পাই না, কষ্টগুলো এসে আমাদের বুকে হাহাকার করে, অন্তরের জগৎটাকে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে, নিজেদের খুব একা মনে হয়। এ ধরনের অনুভূতি আমাদের তো প্রায়ই হয়। তাই না, ভাই? এমনটা হলে আমরা সাধারণত কী করি?

অনেকে গার্লফ্রেন্ডকে ম্যাসেজ দেয়, ফোনে কথা বলে। কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়, কেউবা মোবাইলে গেইমস খেলে, কেউ গান শোনে বা মুভি দেখে সাময়িক প্রশান্তি লাভ করার চেষ্টা করে। আবার কেউ পড়ে পড়ে মড়ার মতো ঘুমায়। কিন্তু এসব করে কি আদৌ মনের কষ্ট ও হতাশা দূর হয়, না হয় না; বরং আরও বেড়ে যায়!

প্রিয় ভাই, আমাদের হাসিগুলো কৃত্রিম হাসি। আমাদের খুশিগুলো লোক দেখানো, আমরা আসলে মন থেকে হাসতে পারি না। ফেসবুকে হাসিমাখা ছবি পোস্ট করার জন্য আমরা জোর করে হাসি। ঘুরতে গিয়ে কিংবা খেতে গিয়ে প্রচুর ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করে আমরা মানুষ কে বোঝাতে চাই – দেখো, আমরা কতটা সুখী। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলেই তাই?

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় হৈ হুল্লোড় করলেও যখনই আমরা একটু একা হই, যখন রাতে ঘুমাতে যাই, হতাশা, বিষণ্ণতা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। কিন্তু কেন? কেন আমরা হ্রদয়ের প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত? কেন আমাদের জীবনটাকে এত এলোমেলো মনে হয়?

প্রিয় ভাই, আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। আমাদের অন্তুর অস্থির হয়ে আছে; কারণ, আমাদের অন্তর ক্ষুধার্ত। আমাদের শরীর যেমন ক্ষুধার্ত হয় তেমনিভাবে আমাদের অন্তরও ক্ষুধার্ত হয়। পেটে ক্ষিদে পেলে তুমি পেট পুরে ইচ্ছেমতো খাও। ক্ষিদের জ্বালা মেটাও। কিন্তু অন্তরেরও যে ক্ষিদে পায় তা নিয়ে কখনো ভেবেছ? অন্তরকে তার খোরাক দিয়েছ?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের অন্তরকে এমনভাবে বানিয়েছেন যেন তা পেটের মতো। ক্ষুধায় কাতর হয়, ক্ষুধায় কাতর এই অন্তর যখন খাবার পায় না, তখন অন্তর অস্থির হয়ে উঠে, তখন তুমি আর অন্তরে শান্তি পাও না। পেটে ক্ষিধে পেলে তুমি কিছু না কিছু খেয়ে ক্ষিধের জ্বালা মেটাও। কিন্তু অন্তরের খোরাক কী? অন্তরের ক্ষিধে তুমি কী দিয়ে মেটাবে?

আমার ভাই, অন্তরের খাদ্য হলো ঈমান ও নেক আমল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের অন্তরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যতক্ষণ এটি ঈমান ও নেক আমল পাবে না, এটি কখনো শান্ত হবে না। তাই তো অনেক অমুসলিম অন্তরের ক্ষুধায় অস্থির হয়ে ঘুরতে থাকে। অবশেষে অনেক সাধনা করে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ঈমানের সন্ধান পায়- তারপর শান্ত হয়। আমরা তো আল্লাহর রহমতে মুসলিম। তা হলে আমরা কেন অস্থিরতায় ভুগি? আমরা কেন শান্তি পাই না? তার কারণ হলো নেক আমলের অভাব।

প্রিয় ভাই, আল্লাহর ইবাদাত মুমিনদের আত্নার খোরাক। যেই অন্তরে এই খাদ্য ঠিকমতো সরাবরাহ করা হবে না, সেই অন্তর কখনোই শান্তি পাবে না।

তাই তো প্রকৃত মুসলিমরা সবসময় আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকেন। আর শান্তি তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। তাঁরা সর্বদা আল্লাহর আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রাদ; আয়াত ২৮)

ভাই আমার, ইবাদাত ও যিকরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার চেষ্টা করো। তুমি অন্তরে এক অপার্থিব স্বাদ অনুভব করবে, যা আগে কখনো অনুভব করোনি। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এমন আশ্চর্য প্রশান্তি ও নির্লিপ্ততা লাভ করবে, যা আগে কখনো ভাবতেও পারোনি। দুনিয়ার কোনো পেরেশানি কিংবা দুশ্চিন্তা কখনোই তোমাকে আর অস্থির করে তুলতে পারবে না। হতাশা, মন খারাপ কিছুই থাকবে না। আল্লাহর স্বান্নিধ্যের সুখ তোমাকে দুনিয়ার সব দুখ ভুলিয়ে দেবে।

প্রিয় ভাই, কত বড় সৌভাগ্যবান আমরা! আমরা এমন এক রবের গোলাম, যার দরবারে যেতে আমাদের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সবসময় তাঁর দরজা খোলা। যখন ইচ্ছা তাঁর সাথে কথা বলা যায়। মাঝখানে কোনো মধ্যস্থতাকারীর দরকার পড়ে না। কোনো দোভাষীর প্রয়োজন হয় না। যখন ইচ্ছা তার যিকর করে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করা যায়।

প্রিয় ভাই, এবার চলে আসো। অস্থির মন নিয়ে অনেক ঘুরোঘুরি হয়েছে। অশান্ত হৃদয় নিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছ। এবার নিজেকে একটু সময় দাও। এবার তোমার রবের দিকে একটি মনোনিবেশ করো। এবার দ্বীনের পথে ফিরে আসো। ইনশাআল্লাহ, জীবন ও জগতের বাস্তবতা তোমার সামনে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। দ্বীনের মাঝেই তুমি খুঁজে পাবে বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ।

সহজ ১০টি যিকির


by

Tags: