আল্লাহ তাআলার অসংখ্য মাখলুকের মাঝে কিয়ামাতে মূলত দুইটি প্রজাতির ভালোমন্দ কাজের হিসাব নেওয়া হবে। তারা হলো- জিন ও মানুষ। (সূরা যারিয়াত, ৫১ : ৫৬)
আমাদের মাঝে যেমন কিছু দুষ্ট লোক আছে, তেমনি জিনদের মাঝেও দুষ্ট জিন আছে। এরা অকারণেই অন্যদের কষ্ট দেয়। আর কখনো মানুষেরা ভুলক্রমে জিনদের কষ্ট দিলে, তখন তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মানুষদের ক্ষতি করতে চায়।
আমরা জিনদের ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকতে কয়েকটি কাজ করব-
১. প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত সালাতের পর আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারাহ-এর ২৫৫নং আয়াত পড়ব একবার। (সুনানুল কুবরা; নাসায়ী 9848)
একইভাবে আমরা যখন ঘুমাতে যাব, তখনো আয়াতুল কুরসি পড়ব। (সহীহ বুখারি, 2311)
২. প্রতিদিন ঘুমের সময় সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস প্রতিটি একবার করে পড়ব। এরপর হাতে দুই হাতের তালুতে ফু দিয়ে চেহারা ও শরীরের ওপর হাত বুলিয়ে নেব, এভাবে ৩বার করব। (সহীহ বুখারি, 5017) সকাল-সন্ধ্যাতেও এই সুরাগুলো ৩ বার পড়ব। কিন্তু এই সময়ে হাতে ফু দিয়ে শরীর মোছার প্রয়োজন নেই।
৩. এই দুটি দুআ সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়ব :
এক.
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থ: আমি আল্লাহ পাকের কল্যাণকর বাক্যাবলীর উসিলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সুনানু আবী দাঊদ, 3898; মুসনাদু আহমাদ, 8880, সহীহ ইবনু হিব্বান, 1021)
দুই.
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهٖ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ
অর্থঃ শুরু করছি আল্লাহর নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান যমীনে কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। (সুনানু আবী দাঊদ, 5088, তিরমিযি, 3388)
এ ছাড়া নতুন কোনো জায়গায় গেলে অথবা গা ছমছমে রাস্তায় একা একা হাটলে তখনো এই দুআগুলো পড়তে পারি।
৪. টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়ব, এরপর টয়লেটে প্রবেশের দুআ পড়ব। দুআটি হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
অর্থঃহে আল্লাহ!নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।
এভাবে আস্তে আস্তে প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন দুআগুলো শিখে নেব এবং পড়ার অভ্যাস করব। আর কিছু না জানলে অন্তত ‘বিসমিল্লাহ’ বলব।
৫. খাবার সময় বিসমিল্লাহ বলব। যদি কোনোদিন বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যাই, তবে যখন মনে পড়বে তখনই এই দুআটা পড়ব
بِسْمِ اللهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
অর্থঃ খাবারের শুরু এবং শেষ আল্লাহর নামেই করছি। (তিরমিযি, 1558; মুসনাদু আহমাদ, 18963)
এভাবে সব কাজে বিসমিল্লাহ বলার অভ্যাস করব। বিশেষ করে ঘরে প্রবেশের সময়, কাপড় পরিবর্তনের সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময়, অন্ধকারে কোনো কাজ করার সময়, উঁচু থেকে কিছু ফেলার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলব।
আমরা যখন কাজের সময় বিসমিল্লাহ বলি, শয়তান সেখানে হাত দিতে পারে না। যেমন, খাবার সময় বিসমিল্লাহ বললে দুষ্ট জিন-শয়তানরা সেখান থেকে খেতে পারে না, ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বললে শয়তান আমাদের সাথে প্রবেশ করতে পারে না, কাপড় পরিবর্তনের সময় বিসমিল্লাহ পড়লে শয়তানরা আমাদের দেখতে পারে না। (সহীহ বুখারি, 5623, সহীহ মুসলিম, 2012)
৬. নারীদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পর্দার অভ্যাস করা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আল্লাহর ফরয বিধান তো বটেই। দুষ্ট জিন ও মানুষদের ক্ষতি থেকে বাচতেও এর চর্চা করা জরুরি।
৭. কখনো গর্তে প্রসাব করব না। (সুনানু আবী দাঊদ, (29); সুনানুল কুবরা; নাসায়ী )
খাবারের পাত্র খুলে রাখব না। ছোট ভাইবোন থাকলে তাদেরকে সন্ধ্যাবেলায় বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেব না। হাদীসে আছে, সন্ধ্যার সময়ে শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারি, 5623); সহীহ মুসলিম, 2012)
৮. যখন খুব বেশি রাগ, দুঃখ বা খুশির অবস্থায় থাকব, তখন আল্লাহকে স্মরণ করব। বিশেষ করে রাগের সময়। এই সময় মানুষ শয়তানের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই রাগ উঠলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ পড়তে শিখিয়েছেন। সহীহ বুখারি, (3282)
৯. ঘরে কোনো প্রাণীর ভাস্কর্য বা পুতুল থাকলে, অথবা ছবি ঝোলানো থাকলে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। তাই কোনো প্রাণীর ছবি ঝুলিয়ে রাখব না। (সহীহ বুখারি, 3225; সহীহ মুসলিম, 2104)
১০. যদি মনে হয় কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছি, তা হলে রুকইয়াহ শারইয়াহ করব। কোনো তান্ত্রিক, খোনার বা জাদুকরের কাছে যাব না।