আগুন নিয়ে খেলা

প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইনস ডে আসলেই আমাদের ভালোবাসার কথা মনে হয়, উথলে পড়ে তথাকথিত ভালোবাসা। মনে ভালোবাসার ফাগুন-আগুন যেন একসাথেই শুরু হয়। আর শয়তানি মিডিয়া এই আগুনে ঘি ঢালে। শুধুমাত্র ভ্যালেন্টাইনসকে কেন্দ্র করে নাটক, মুভি, সিরিজ, মিউজিক ভিডিও, শর্টফ্লিম ইত্যাদির মতো ফিতনার জাল বিছিয়ে দেয়। সেই জালে আটকে যায় হাজারো ছোট-বড় ভাইবোন।

মিডিয়া সেলিব্রিটিরা আমাদেরকে শেখাতে আসে ভালোবাসা! আমরাও তাদের শেখানো ভালোবাসার লীলাখেলা দেখে আবেগে আপ্লুত হই। অথচ এই মিডিয়া সেলিব্রিটিদের নিজের জীবনেই ভালোবাসা নেই। নেই সুখ-শান্তি, নেই নির্মল জীবনের স্বাদ। তারা নিজেরাই অশান্তি, ঘৃণা আর বিচ্ছেদের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে আমাদেরকে ভালোবাসার সাগরে ডুবাতে আসে। হাস্যকর..

আমি এখানে সমীকরণ তুলে ধরলে হয়তো মিডিয়া পাড়ার সেলিব্রিটিদের নোংরা লাস্টফ-স্টাইল, পরকীয়ার গল্প, বিচ্ছেদ কাহিনি বলে শেষ করা যাবে না। তোমরাও খুব ভালো করে জানো তাদের নষ্টামির কিচ্ছা-কাহিনি। কিন্তু আমার কাছে অবাক লাগে সেই তোমরাই কী করে আবার তাদের শেখানো ভালোবাসার পথে হাঁটতে শুরু করো? তারা যেই ভালোবাসার পথ আমাদেরকে দেখায়, আল্লাহর কসম করে বলতে পারি এই পথে আগুনের ফুলকি ছাড়া কিছু নেই। এই মিডিয়া পাড়ার ব্রেনওয়াশে তুমি আজ এতটাই অন্ধ যে, আগুনের ফুলকির পথকে তোমার ফুলের পাপড়ি বিছানো পথ মনে হয়।

তবে কি তুমিও তাদের মতো প্রবৃত্তির মোহে অন্ধ! আরে তাদের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে তো বিস্তর ফারাক থাকার কথা ছিল।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কাফিরদেরকে লক্ষ্য করে বলেন,

‘এই দু’শ্রেণির লোকের –তথা মুমিন ও কাফিরের- দৃষ্টান্ত হলো, যেমন একজন হলো অন্ধ ও বধির, অন্যজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশীল, এ দু’জন কি তুলনায় সমান হতে পারে? এরপরও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’[1]

চিন্তা করো, আমার তোমার অবস্থাও কি এমন কি না। তারপরও কি তুমি চোখ খুলবে না, ভাই আমার?

না হয় এই বস্তাপঁচা মিথ্যা ভালোবাসার পেছনে যখনই এই হারাম ভালোবাসার পথে অন্ধের মতো হাঁটতে শুরু করবে, তখনই তোমার দুনিয়া-আখিরাত পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে আত্মহত্যা।

হতাশা, অস্থিরতা, লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট, পরিবারের সাথে সম্পর্কের অবনতি, মাদক ইত্যাদি তো আছেই। সাথে নিজের ঈমান-আমলের করুণ অবস্থা! মিডিয়া পাড়া পাশ্চাত্যের তরুণদেরকে আমাদের সামনে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে। আমরা পর্দায় দেখি, ওরা বাধাহীন প্রেম করছে যা খুশি তাই করছে, ওদেরকে বাধা দেবার কেউ নেই। আমাদের বাবা-মা, অভিভাবক বা সমাজের মতো নিষেধ করার কেউ নেই। পর্দায় আমাদের দেখানো হয়, ওরা কত সুখে আছে! কী চুটিয়েই না ওরা জীবনকে উপভোগ করছে! কিন্তু আসলেই কি তাই?

তুমি একটু রিসার্চ করলেই দেখবে- ওরাই সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে, মানসিক অবসাদ ওদের মধ্যেই বেশি। ওদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক অনেক বেশি। এই মিথ্যা মিডিয়া তোমাদের সামনে এগুলো আড়াল করে রেখেছে। মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে রেখেছে। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে শান্তি পাওয়া যায় না, ভাই।

বল্গাহীন এই প্রেমের অনিবার্য ফল হলো যিনা। আর যিনার শাস্তি অনেক ভয়াবহ।

তোমাকে একটা ছোট্ট পরীক্ষা করতে বলি। মোমবাতি জ্বালাও বা চুলা জ্বালাও। এরপর আগুনের শিখায় তোমার একটা আঙ্গুল কিছুক্ষণ ধরে রাখো। কেমন লাগছে? সহ্য করতে পারছ? এই সামান্য সময় সামান্য দুনিয়ার আগুন যদি সহ্য করতে না পারো, তা হলে জাহান্নামের অনেকগুণ তীব্র আগুন তুমি কীভাবে সহ্য করবে, ভাইয়া? তুমি কি এই হাদীসগুলো শোনোনি?

সহীহ বুখারিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বপ্নের বিবরণ সম্বলিত যে হাদীসটি সামুরা ইবনু জুনদুব রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উল্লেখ রয়েছে, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিবরীল ও মীকাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর কাছে এলেন এবং আমি তাঁদের সাথে পথ চলতে শুরু করলাম। এক পর্যায়ে আমরা বড় একটা চুল্লির কাছে এসে পৌঁছলাম। সে চুল্লির উপরিভাগ সংকীর্ণ ও নিম্নভাগ প্রশস্ত। ভেতরে বিরাট চিৎকারও শোনা যাচ্ছিল। আমরা চুল্লিটার ভেতরে দেখতে পেলাম উলঙ্গ নারী ও পুরুষদেরকে। তাদের নিচ থেকে কিছুক্ষণ পর পর এক একটা আগুনের হলকা আসছিল, আর তার সাথে সাথে আগুনের তীব্র দহনে তারা প্রচন্ডভাবে চিৎকার করছিল।

নবিজি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে জিবরীল, এরা কারা?’ জিবরীল আলাইহিস সালাম তখন নবিজিকে জাহান্নামের আরও কিছু দৃশ্য দেখান। শেষে বলেন, এরা ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ।[2]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারও মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই নারীকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভালো, যে নারী তার জন্য হালাল নয়।’[3]

আমি অনেককেই বলতে দেখি, সে তার গফ/বফকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। আচ্ছা, এটা কেমন ভালোবাসা, যেই ভালোবাসা তোমার প্রিয় মানুষটিকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যাকে তুমি এতটাই ভালোবাসো, কি করে তাকে দিয়ে দিনের পর দিন গুনাহ করিয়ে নিচ্ছ? এটা কেমন ভালোবাসা! নিজেকে প্রশ্ন করো, এই ভালোবাসার পরিণাম কী হবে? প্লিজ ভাই উত্তরটাও তুমি দিয়ে যেয়ো..

এই হারাম ভালোবাসার মোহে অন্ধ হয়ে তোমার কাছে আজ হালাল জিনিস ভালো লাগে না। মিডিয়াপাড়া আমাদের এতটাই ব্রেনওয়াশ করে দিয়েছে যে, কেউ যদি হালালকে আঁকড়ে ধরতে চায় তখন তাকে সবাই অন্যচোখে দেখা শুরু করে। একজন শাইখ বলেছিলেন, ‘তুমি যখন হারামে ডুব দিবে, হারামকে পছন্দ করা শুরু করবে, তখন তোমার কাছে হালাল জিনিসগুলো ভালো লাগবে না, বিরক্তিকর মনে হবে এটাই স্বাভাবিক।’

এই যে দেখো, যারা নিজের দ্বীনকে বিসর্জন দিয়ে হারাম রিলেশনে লিপ্ত হয়েছে তারা কিন্তু দ্বীনের কথা শুনলে বিরক্তবোধ করে। হারাম রিলেশনের ভয়াবহতা সম্পর্কে শুনতে তারা আগ্রহী নয়। অথচ তারা অশ্লীল নাটক, মুভি, মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি সম্পর্কে খুবই আগ্রহী।

আচ্ছা, তোমাকে যদি প্রশ্ন করি নিজের রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে ভালোবাসো? যদি বলি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসো? চোখ বন্ধ করেই তুমি ‘হ্যাঁ’ বলে দিবে, কোনো কিছু চিন্তা করার আগেই… অথচ তুমি রবের হুকুম আর হালাল হারামের তোয়াক্কা না করেই হারাম রিলেশন করে যাচ্ছ।

যখন আল্লাহ বলেছেন, ‘যিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।’[4]

তখন কীভাবে তুমি অবাধে ফ্রি-মিক্সিং, হারাম রিলেশনে জড়িত থাকতে পারো?

যখন তিনি বলেছেন, ‘দৃষ্টির হিফাযত করো’[5]

তখন কীভাবে তুমি বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টিভরে তাকিয়ে থাকো?

যখন তিনি বলেছেন, ‘জিলবাবের এক অংশ নিজেদের ওপর টেনে নাও।’[6]

তখন কীভাবে তুমি বেপর্দায় চলাফেরা করো?

যখন মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, ‘দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর লজ্জাস্থান সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।’[7]

তখন তুমি কীভাবে হারাম রিলেশন করে যাচ্ছ?

দিনের পর দিন রবের নাফরমানি করে যাচ্ছ… দিনশেষে মুনাফিকের মতো বলে যাও, আমি আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসি। আমি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে ভালোবাসি! একটুও কি অনুশোচনা হয় না? যেখানে পাপ করার পর আমাদের লজ্জা লাগা উচিত ছিল, নিজের কাছে খারাপ লাগার কথা ছিল। সেখানে উলটো তুমি হারাম রিলেশন করে আনন্দ প্রকাশ করছ আর আত্মতৃপ্তি ঢেকুর তুলছ।
যেই বাবা তোমাকে খেয়ে-না-খেয়ে কত কষ্ট করে টাকা দেন, সেই টাকা দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের পেছনে টাকা ঢালতে তোমার খারাপ লাগে না? যেই মা তোমাকে দশ মাস দশদিন গর্ভধারণ করেছেন, সেই মায়ের চোখে তাকিয়ে- এক্সট্রা ক্লাস আছে, আজকে আসতে দেরি হবে- এত বড় মিথ্যা কথা বলতে তোমার একবারও বুক কাঁপে না? বাবা-মার প্রতি তোমার কেমন ভালোবাসা?

সত্যি বলতে, আজকের এই সমাজে যেটাকে আমরা ভালোবাসা বলি, এটা কখনো ভালোবাসা হতে পারে না; এটা হলো জাহিলিয়াত। পশ্চিমা সভ্যতা আর মিডিয়াপাড়া মিলে সুন্দর ভালোবাসার সংজ্ঞাকে বদলে দিয়েছে জাহিলিয়াতের দ্বারা।

তারা তো তোমাকে ভালোবাসার গল্প শুনায়, কাছে আসার গল্প শোনায়। চলো, এখন আমিও একটু ভালোবাসার গল্প শোনাই…

একটা হাদীস দিয়ে শুরু করতে চাই। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘সেই আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই।’[8]

এই হাদীস অনেকবার শুনেছ, কিন্তু কখনো কি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছ? আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসাতে হবে। আমরা মুখে এটা স্বীকার করলেও আমাদের কাজকর্ম প্রমাণ করে আমরা ভালোবেসেছি পশ্চিমা সভ্যতাকে।

আমাদের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হলো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)। এই ভালোবাসার টানেই মক্কার মিলিয়নিয়ার সন্তান মুসআব ইবনু উমাইর (রদিয়াল্লাহু আনহু) নিজের বিলাসবহুল জীবন, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে ছুটে এসেছিলেন রাসূল (ﷺ) এর কাছে।

এই ভালোবাসার টানেই বদরের ময়দানে আনসার সাহাবিদের পক্ষ থেকে সাদ ইবনু মুআয (রদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (ﷺ)-কে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আপনি যদি আমাদের সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন, আমরা তা-ই করব। আমাদের একজনও পিছপা হবে না।’[9]

আল্লাহ এসং আল্লাহর রাসূলের জন্য আরও কতশত ভালোবাসা আর ত্যাগের উদাহরণ দেওয়া যাবে। নবিজির ভালোবাসার সামনে সব কিছুই তুচ্ছ মনে করতেন সাহাবিরা। আর আমরা? আমরা সামান্য গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ছাড়তে পারছি না! ভালোবাসা দিবস উদযাপন না করে থাকতে পারছি না।

এবার আসি আমরা সাধারণত ভালোবাসা বলতে যা বুঝি সেটায়। অর্থাৎ, রোমান্টিকতা। ইসলামেও রোমান্টিকতা আছে, এটা হলো স্ত্রীদের সাথে হালাল প্রেম-ভালোবাসা। বস্তাপঁচা হারাম রিলেশনের গল্প শোনতে-শুনতে আমরা এসব হালাল রোমান্টিসিজম ভুলে গিয়েছি… তা হলে শুনো ভাই আমার, আমারদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় রাসূল (ﷺ) তাঁর স্ত্রীদের কতটুকু ভালোবাসতেন..

আয়িশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক অভিযানে বের হলাম। তখন আমি অল্পবয়সী ছিলাম, শরীর তেমন মোটা ছিল না। তিনি তার সাথিদেরকে বললেন, তোমরা আগে চলো, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দিই, প্রতিযোগিতায় আমি এগিয়ে গেলাম। এরপরে আমার শরীরে মেদ বেড়ে গেল, একটু মোটা হলাম। একদা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার সাথিদেরকে বললেন, তোমরা আগে চলো, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর আমাকে বললেন, এসো, আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দিই, প্রতিযোগিতায় তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। তিনি হেসে হেসে বললেন, এটা তোমার পূর্বের প্রতিযোগিতার উত্তর (অর্থাৎ তুমি আগে প্রথম হয়েছিলে, এবার আমি প্রথম হলাম, তাই মন খারাপ কোরো না)।[10]

আয়িশা রদিয়াল্লাহু আনহা যে পাত্র দিয়ে পানি পান করতেন, যেই অংশে তাঁর মুখের ছোঁয়া লেগেছে… রাসূল (ﷺ) ঠিক সেই পাত্র দিয়ে এবং পাত্রের সেই অংশটা দিয়ে পানি পান করতেন। খাবারের সময় একটি হাড়ের টুকরা পর্যন্ত দুজন মিলে খেতেন।[11]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন।

আর পশ্চিমা সাংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার হওয়া আমাদের ভালোবাসার উদাহরণ ডাস্টবিন, ফার্মেসি, রেস্টুরেন্ট, অনলাইনের ভাইরাল ভিডিও, লিটনের ফ্ল্যাট, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, আত্মহত্যা, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাওয়া যায়।

আমরা গফ/বফের জন্য কান্না শুরু করে দিই, নাটক সিনেমার ক্লিপ দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে যাই… অথচ রাসূল (ﷺ)-এর কথা ভেবে কান্না আসে না। কাঁদা তো দূরে থাক, তাঁর একটি সুন্নাহ পর্যন্ত মানার নাম নেই।

আর নিজের সাথে প্রবঞ্চনা কোরো না, ভাই আমার, বোন আমার! আঁধারের ফেরিওয়ালারা তোমাকে যে পথে ডাকছে সেই পথে সুখ নেই। সেই পথে শুধু হতাশা, ধ্বংস, মৃত্যু আর জাহান্নামের আগুন।
ফিরে আসো, ভাই! হয়তো তুমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছ, অনেক ভুল করেছ, করেছ রবের নাফরমানি। তারপরও আল্লাহ তাআলা তোমাকে ভালোবাসেন… সময় শেষ হয়ে যায়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’[12]

দেখেছ, তোমার রব তোমাকে এতটাই ভালোবাসেন যে, তুমি যদি তাওবা করে তাঁর দিকে ফিরে আসো তা হলে তোমার আগের পাপগুলো ক্ষমা করে দিয়ে পূণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন। তারপরও কি তুমি বেরিয়ে আসবে না হারাম রিলেশন আর পশ্চিমাদের নোংরা সভ্যতার বলয় থেকে? তারপরও যদি ফিরে না আসো তা হলে জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছু নেই ভাই।
হারাম সম্পর্কের ইতি ঘটাও এখনই। অবশ্যই পড়ে ফেলো এই লেখাগুলো-

বদলে যাবার দিনে-
https://tinyurl.com/2mkfynzv
https://tinyurl.com/2p8azjcn

কীভাবে ব্রেকআপ করবে –
https://tinyurl.com/mrcjwjbc

ব্রেকআপ করার পরের কষ্ট কীভাবে ভুলবে? –

ভ্যালেন্টাইন এর সারাদিন সতর্ক থাকো। ক্লাস শেষে সোজা বাসায় বা রুমে চলে আসো। দরকার হলে ওইদিন ক্লাসে যেয়ো না। ইউটিউব, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম থেকে দূরে থাকো। একটু সবর করো। জান্নাতের নিয়ামাতের কথা ভাবো। আর আল্লাহর কাছে দুআ করো- আল্লাহ যেন তোমাকে সবরের শক্তি দেন।

হাদীসে নববিতে শেখানো এই দুআ বেশি বেশি পড়ো :

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قُلُوبَنَا عَلَى دِينِكَ

‘হে হৃদয়ের মালিক, যিনি একচ্ছত্রভাবে অন্তরসমূহ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন, আমাদের অন্তরগুলোকে আপনার দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠত ও মজবুত রাখুন।’[13]

আল্লাহ যেন তোমাকে এই সবরের জন্য, কষ্টের জন্য উত্তম একজন সঙ্গী মিলিয়ে দেন।
তুমি যদি পবিত্র থাকো তা হলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ভালো একজন সঙ্গী দান করবেন। এই কয়েকটা দিন দেখতে দেখতে চলে যাবে। বিয়ের পরে এই দিনগুলোর কথা… এই সবরের কথা ভেবে তুমি খুব মজা পাবে। বলে রাখলাম, দেখো!

প্রিয় ভাই/বোন,
তুমি রবের কাছে মূল্যবান একজন উম্মত, তুমি একজন মুসলিম, উম্মাহর সম্পদ তুমি। কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতা আর দাজ্জালি মিডিয়ার কাছে তুমি একজন প্রোডাক্ট মাত্র। তোমার আবেগ অনুভূতি নিয়ে তারা ব্যবসা করে যাচ্ছে। কেন বুঝতে পারছ না?! তারা কখনো চায় না তুমি হালালভাবে প্রশান্তির জীবন কাটাও… লেজকাটা শিয়ালের গল্পের মতো তোমার জীবনকেও ওরা নষ্ট করে দিতে চায়। কারণ, ওদের জীবন তো নষ্টামিতে ভরপুর। তাই তোমাদেরকেও ওরা সে পথে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের পথ একটাই, দ্বীন ইসলামের পথ। যে পথের শেষে আছে জান্নাত।

এই যে আমি এতগুলো কথা তোমাদের বললাম, সেটাও কিন্তু ভালোবাসার জন্যই বলেছি। আর এটা একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। আল্লাহ যেন এই ভালোবাসার জন্য আমাদের সবাইকে জান্নাতে একত্রিত করেন। সেদিন জান্নাতের নির্মল বাগানে সবাই মিলে তোমার ফিরে আসার গল্প শুনব, ইন শা আল্লাহ।

***

[1] সূরা হূদ, ১১ : ২৪

[2] সহীহ বুখারি (৭০৪৭)

[3] মুসনাদুর রূইয়ানি, ১২৮৩; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবারানি, ৪৮৬। হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত, দেখুন : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব; মুনযিরী ৩/৩৯, মাজমা‘উয যাওয়াইদ; নূরুদ্দীন হাইছামী, ৭৭১৮।

[4] সূরা বানী ইসরাঈল, ১৭ : ৩২

[5] সূরা নূর, ২৪ : ৩০

[6] সূরা আহযাব, ৩৩ : ৫৯

[7] সহীহ বুখারি (৬২৪৩) ও সহীহ মুসলিম (২৬৫৭)

[8] সহীহ বুখারি (15) ও সহীহ মুসলিম (44)

[9] সীরাতু ইবনি হিশাম (সীরাতু ইবনি ইসহাকের সংক্ষিপ্তরুপ) 1/615, ইবনু কাসীর রহ. ইবনু ইসহাকের আলোচিত বর্ণনাটি সমর্থন করেছেন। দেখুন, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, 3/321, দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবি, বৈরুত

[10] সুনানু আবী দাঊদ, (2578), সহীহ ইবনে হিব্বান (৪৬৯১)

[11] মুসলিম, হাদীস নং ৩০০

[12] সূরা ফুরকান, ২৫ : ৭০

[13] মুসনাদু আহমাদ, (17630); সহীহ ইবনু হিব্বান, (943)।


by

Tags: