কুয়াশার চাদরে

গলা থেকে পা পর্যন্ত কম্বল মুড়ি দিয়ে হয়তো লেখাটি পড়ছ। কারণ, আজকের সকালটাও যে গায়ে ছাইরঙা কুয়াশার চাদর জড়িয়ে রেখেছে!

অথবা একরাশ শুভ্র ধোঁয়ায় নাক ডুবিয়ে চুমুক দিচ্ছ চায়ের কাপে। চা খেতে খেতেই তোমার সাথে কিছু আড্ডা দিই চলো..

আচ্ছা, শীতের এই সময়টা তোমার কাছে কেমন লাগে বলো তো? খুব রুক্ষ-শুষ্ক-বিদঘুটে?

হ্যাঁ, কিছুটা তো তা-ই। আর সে জন্যই এই সময়টাতে কিন্তু আমাদের আরও একটু বাড়তি সর্তক থাকা উচিত।

তাহলে চলো, ঝটপট শুনে নিই শীতের এই সময়টাতে কী করব, আর কী একেবারেই করব না-

এই সময়টাতে অনেকের কাছেই একটি আতঙ্কের নাম হলো- গোসল। এ যেন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা!

তবে তোমরা যারা সচেতন তারা তো জানোই, গোসল না করাটা মোটেই ভালো কিছু নয়। এতে করে বরং শরীরে রোগজীবাণু বাসা বাঁধার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

তাই গোসল একেবারেই বাদ না দিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারো। এতে করে শরীরের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকবে আর সারাটা দিন তুমি থাকবে ফ্রেশ ফুরফুরে মেজাজে, ইনশাআল্লাহ!

একইভাবে ওযুর ক্ষেত্রেও কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারো।

গোসল বা ওযুর পরে শরীরে ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম মেখে নেওয়া উচিত। এতে শরীরের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় না। অনেকে কনফিউশনে থাকে, কোন ব্র্যান্ড ব্যবহার করবে? কোনটা সবচেয়ে ভালো?

এসব কনফিউশনের কারণ নেই। আমাদের দেশীয় প্রোডাক্টগুলোই অনেক ভালো মানের। যেকোনো একটি ব্র্যান্ড ইউজ করতে পারো।

তবে কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পর যদি সমস্যার সম্মুখীন হও বা পণ্যটি তোমার ত্বকের উপযুক্ত না হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত পণ্যটি আর ব্যবহার না করে অন্য ব্র্যান্ড ব্যবহার করাই ভালো।

অনেকের ধারণা, সানস্ক্রিন লোশন কেবলমাত্র গরমের দিনের জন্য। তবে শীতের দিনেও কিন্তু রোদের তীব্রতা কম থাকে না। তাই রোদে বেরোবার সময় সম্ভব হলে সানস্ক্রিন লোশন মেখে নিতে পারো।

ঠোঁটের প্রতি বাড়তি যত্ন নাও। ঠোঁটের ওপরের ত্বক পাতলা হওয়ায় এর ওপর শীতের প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।

অনেকের একটা অদ্ভুত অভ্যাস থাকে। একটু পরপর জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁটটুকু ভিজিয়ে নেয়। এতে বরং ঠোঁট ফাটার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

কাজেই জিভের ব্যবহার না করে ‘পেট্রোলিয়াম জেলি’ ব্যবহার করো।

ওহ, ভালো কথা। শুধু শরীরের বাইরের অংশের নজর দিলেই কি কাজ শেষ?

না! সুস্থ থাকতে হলে রোজকার খাবারের মেনুতেও কিন্তু একটু নজর দিতে হবে।

মজার ব্যাপার হলো, আল্লাহ তাআলা শীতকালে প্রচুর ফলমূল-শাকসবজির নিয়ামাত দিয়ে আমাদেরকে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ!

তাই মৌসুমি ফলমূল ও শাকসবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। তোমরা কি জানো যে, মৌসুমি ফলমূলগুলো ঐ বিশেষ মৌসুমে যে রোগ বালাই হয় তার বিপরীতে অনেক বেশি কার্যকরী?

শীতকালে আমরা অনেক সময় পানি পানের কথা একেবারেই ভুলে যাই। যেহেতু এ সময় ঘাম কম হয়, সেহেতু গরমকালের তুলনায় ‘সামান্য’ পানি কম পান করলে অসুবিধে নেই। কিন্তু সাবধান থাকতে হবে, পরিমাণটা একেবারেই যেন কম না হয়ে যায়।

কারণ তো জানোই, সুস্থ শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি কতটা দরকারি।

আরেকটা বিষয়, আপুরা টুকটাক ত্বকের যত্ন নিলেও ভাইগুলো কেন যেন এ ব্যাপারে একটু ড্যামকেয়ার হয়। এমনটা হওয়া যাবে না, বুঝলে?

না, আমি বলছি না টেলিভিশনের চটকদার বিজ্ঞাপনে দেখানো জেন্টস ক্রীম-ফেসওয়াশ এসব ব্যবহার করতে। ওসব আসলে খুব বেশি কাজের জিনিস না। কিন্তু শীতের এই সময়ে ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন তো নিতেই হবে।

এক্ষেত্রে একটা মজার ব্যাপার বলে নিই। যে ভাইয়াদের দাড়ি রয়েছে তারা কিন্তু কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ পাবে! কারণ দাড়ি পুরুষের মুখের সংবেদনশীল ত্বকের জন্য একটা বাড়তি প্রোটেকশন হিসেবে কাজ করে।[1]

দেখলে তো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ কতটা বৈজ্ঞানিক!

এইরে.. তোমার চা তো একদম জুড়িয়ে গেল!

আজকের মতো আমি যাই। আল্লাহ চাইলে আবার কোনো একদিন আড্ডা হবে। ততদিন শরীরের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ঈমানের যত্নটুকুও নিয়ো

[1] https://tinyurl.com/tnzxtz7m


Posted

in

by

Tags: